নওগাঁ: চাহিদা ও দামের তুলনায় নওগাঁয় ডিমের উৎপাদন বেশি। এছাড়া মুরগির খাবার এবং ওষুধের দামও বেশি। ফলে পোল্ট্রি খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে গত ৬ মাস থেকে। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে মুরগির খাবারসহ আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম কমাতে হবে নতুবা ডিমসহ মুরগির দাম বাড়তে হবে। এমনই দাবি তুলেছেন জেলার পোল্ট্রি খামারিরা
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ১৯০টির মতো পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এখানে ডিমের যেখানে চাহিদা ২ হাজার ৬২২ লাখ পিস সেখানে উৎপাদন হয় ৩ হাজার ২৪৯ লাখ পিস। ফলে উদ্বৃত্ত থাকে ৬২৭ লাখ পিস ডিম।
বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে পাঁচঘরিয়া গ্রামে মেসার্স মিম পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি। খামারে ২১টি শেডে মুরগি আছে ৪০ হাজার। প্রতিটি শেডে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার মুরগি থাকে। এরমধ্যে ১৬ হাজার হাইব্রিড জাত এবং ২৪ হাজার সোনালি জাতের মুরগি।
ডিম দেয়ার উপযোগী মুরগি আছে ২০ হাজারটি। এরমধ্যে প্রতিদিন ৫ হাজার হাইব্রিড এবং ৩ হাজার সোনালি জাতের মুরগি ডিম দিচ্ছে। একটি শেডে প্রতিদিন ৩০০ কেজি খাবার হিসেবে ৩২ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়। এরসঙ্গে ওষুধ ৩০০ টাকা, শ্রমিক ৪০০ টাকা, আনুষঙ্গিক ১০০ টাকা। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়। ডিম আসে ১ হাজার ৭৬০ পিস। এসব ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার ৬০০ টাকায়। গত ৫-৬ মাস যাবৎ চলছে এ অবস্থা।
প্রতিটি লাল ডিম উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৬-৭ টাকা। সেখানে ডিম বিক্রি হয় সাড়ে ৫-৬ টাকায়। সোনালি জাতের ১ কেজি ওজনের মুরগি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১৮০-১৯০ টাকা। যেখানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা।
মেসার্স মিম পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি মালিক ফিরোজ হোসেন বলেন, প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। এর মূল কারণ ডিমের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি। সরকারিভাবে বিদেশ থেকে মুরগির খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে আসা হয়। যার ট্যাক্সের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
শ্রমিক জিল্লুর রহমান বলেন, গত দুই বছর থেকে এ খামারে ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। তার মতো এ খামারে ৪২ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
ভান্ডারপুর বাজারে মেসার্স পারফেক্ট পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি মালিক নূরে আলম রিংকু বলেন, তার খামারে ১ হাজার ৩০০ ডিম দেয়া মুরগি ছিল। প্রতিদিন খরচ হতো প্রায় ৬ হাজার টাকা। ডিম বিক্রি করে সেখান থেকে আসত সাড়ে ৪-৫ হাজার টাকা। ডিমের দাম কমে যাওয়ায় মুরগি বিক্রি করে দেন। সেখানেও ৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
নওগাঁ কাঁচাবাজার পাইকারি ডিম আড়তের মালিক রাসেল বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার পিস ডিম বেচাকেনা হয়ে থাকে। পাইকারি প্রতি পিস ডিম সাড়ে ৫-৬ টাকা এবং খোলা বাজারে সাড়ে ৬ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আগামীতে ডিমের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। তবে ডিমের দাম কম হওয়ায় খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার দাস বলেন, আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্প একটি উদিয়মান শিল্প। অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় চাহিদার তুলনায় ডিমের উৎপাদন বেশি। মানুষের ডিম খাওয়ার অভ্যাসের প্রবনতা বাড়াতে হবে। ডিম খাওয়ার বিষয়ে মানুষকে যদি উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয় তাহলে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরো বলেন, অপরিকল্পিত ভাবে কিছু খামারি অভিজ্ঞতা ছাড়াই মুরগি খামার করেন। পরিকল্পনা না থাকায় মুরগিকে অতিরিক্ত খাবার ও ওষুধ দেয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। যার কারণেও লোকসান গুনতে হয়। কিন্তু বড় খামারিরা সেটা পুষিয়ে নিতে পারেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস