শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০৬:৩৪:০৪

জিরা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক জহুরুল

জিরা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক জহুরুল

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ : জিরা মসলা জাতীয় ফসল। দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে জিরা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই রান্নার স্বাদ ও ঘ্রান বাড়াতে জিরার ব্যবহার হয়ে আসছে। জিরা শুধু মসলা নয়, বহু রকমের বিশেষ ঔষধিগুন সম্পন্ন। 

এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় তা নয়; শরীরের নানা সমস্যা সমাধানে জিরার জুড়িমেলা ভার। আর এই মূল্যবান ফসল জিরা চাষ করে নওগাঁয় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম। তিনি বাড়ির পাশে ৮ শতক জমিতে জিরা চাষ করেছেন। তার এই জিরা চাষ দেখে স্থানীয় অন্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে। 

নওগাঁর রানীনগরের শিয়ালা গ্রামের সফল কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। বাজারে জিরার দাম বেশি হওয়ায় তিনি জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। অনলাইনে জিরা চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে শুরু করেন। 

অনেক চেষ্টা করে অনলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ১২০০ টাকা খরচ করে ৫০০ গ্রাম জিরা বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৮ শতক জমিতে এই জিরা বীজ রোপন করেন। বর্তমানে জিরা গাছে ফুল ও জিরা এসেছে। গাছে যতগুলো ফুল, ততগুলোই জিরা ধরছে। 

হিসাব করে দেখছি যেভাবে জিরা ধরছে তাতে ৮ শতক জমি থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি জিরা পাওয়া যাবে। বাজারে জিরার দাম ভালো থাকায় যার বাজারমূল্যে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। জিরা চাষ একটি লাভজনক ফসল মনে হয়েছে। বীজ বপণের ৩ থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে জিরা ঘরে উঠতে। জিরা চাষে অনেকটা সফল হওয়ায় স্থানীয় কৃষদের মধ্যেও জিরা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রথমে বীজ সংগ্রহের পর পানিতে ৩০টি জিরা বীজ ভিজে টিস্যুর মধ্যে রেখে পরীক্ষা করি, কি পরিমাণ গাছ গজাবে। পরে ৩০টির মধ্যে ২৬টি গাছ উঠে। তখন ৮ শতক জমি হাল চাষ ও সার ছিটিয়ে বীজ রোপন করি। বীজ রোপনের ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জিরা গাছ উঠতে শুরু করে। 

পরে বৃষ্টির কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। বাকি গাছগুলো ভালো করে যত্ন নেওয়া শুরু করি। তাতে জিরা চাষ একটি লাভজনক ফসল মনে হয়েছে। তবে জিরা চাষ শীতকালে ভালো হয়। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে জিরা চাষ সফল দাবি করে আগামীতে আরও বড় পরিসরে জিরা চাষাবাদের পরিকল্পনা করছেন তিনি।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, জহুরুল ভাই নতুন ফসল জিরা চাষ করেছেন। জিরা চাষ ইতোপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। প্রথম হলেও খুব সুন্দর তার জিরার গাছ হয়েছে। বাজারে জিরার দাম ভালো রয়েছে। 

চিন্তা করছি তার দেখাদেখি আমরাও জিরা চাষ করবো এবং জিরা চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। শুনলাম তার এই জমিতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে আর পাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মতো। কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করলে আমরাও জিরা চাষ করবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, জহুরুল ইসলাম উদ্যোগী একজন কৃষক। তিনি নতুন ফসল হিসেবে জিরা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন। তার জিরা চাষ কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক নজরে রেখেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত এটার ফলন কেমন হয় সেটা দেখবো। 

তিনি জিরা চাষে সফল হলে উঠান বৈঠক, সভা, সেমিনার করে অন্য কৃষকদের জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে। দেশে যে পরিমাণ জিরার চাহিদা তার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। জিরা মসলা এখনও বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর। তাই এই জিরা চাষে সফল হলে কৃষিতে বাণিজ্যকরণ ও জিরা উৎপাদন করে আমদানির পরিমাণ কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে