সিলেট : সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ভূমি আত্মসাতের দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে শিল্পপতি রাগীব আলীর। এ অবস্থায় সপরিবারে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে গেছেন তিনি।
সীমান্ত অতিক্রম করে তার ভারত পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমা।
শুক্রবার বিকেলেই গণমাধ্যমের গোচরে আসে বিষয়টি। এ ব্যপারে জানতে চাইলে সিলেটের পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছার আগেই সপরিবার রাগিব আলী ভারত চলে গেছেন। পরোয়ানা পুলিশের হাতে না থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, খবরটি শোনার পর শুক্রবার তিনি জকিগঞ্জ সীমান্তে গিয়ে ভারত যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
এর আগে বুধবার দুপুরে সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো দুটি মামলায় রাগীব আলী, তার পুত্র-কন্যাসহ পরিবারের ৫জন এবং তারাপুর বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্তসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর শুনেই বুধবার বিকেল ৩টার দিকে একটি নোয়া গাড়িতে করে রাগীব আলী, তার ছেলে আবদুল হাই, আবদুল হাইয়ের স্ত্রীসহ ৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে জকিগঞ্জ যান।
জকিগঞ্জে রাগীব আলীর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তাদের পাসপোর্ট নিয়ে সীমান্তের কাস্টমে ইমিগ্রেশন অফিসে যান। বিকেল সাড়ে ৫টায় রাগীব আলীসহ অন্যরা নৌকা দিয়ে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে ভারতে পাড়ি জমান। রাগীব আলী ওই নৌকার মাঝিকে ভাড়া বাবদ ৭শ’ টাকা দেন বলে জানা গেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা অপর মামলায় এ দুজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন একই আদালত।
পরোয়ানার অপর চারজন হলেন তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদির।
গত ১০ জুলাই আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান ওই দুই মামলার অভিযোগপত্র দেন।
গত বুধবার ছিল মামলার শুনানির দিন। ওইদিন রাগীব আলী অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন, কিন্তু আদালত আবেদন নাকচ করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার ওপর তারাপুর চা বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। আশির দশকে জালিয়াতির মাধ্যমে দখলে নেন রাগীব আলী।
এ নিয়ে চলা মামলায় আদালতে একটি রিট পিটিশনের ভিত্তিতে গত ১৯ জানুয়ারি তারাপুরে রাগীব আলীর দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বাগানের সব স্থাপনা ৬ মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
১২ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম