রবিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:১৩:২০

সিলেটে ডাক্তারের ভূমিকায় ঝাড়ুদার

সিলেটে ডাক্তারের ভূমিকায় ঝাড়ুদার

সিলেট: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। জরুরি বিভাগে আগত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না এ হাসপাতালে। মাঝে মধ্যে এসব রোগীকে ডাক্তারের বদলে চিকিৎসা দিচ্ছেন ঝাড়ুদার ও আয়া। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের।

সরকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এবং ওষুধপত্র হাসপাতালে দিলেও  কর্তৃপক্ষের নাই নাই এমন শব্দ শুনতে শুনতে ত্যক্ত-বিরক্ত হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর অসন্তোষ।

এলাকাবাসীর দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে হাসপাতাল থেকে বিমুখ হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, গত ৪ঠা অক্টোবর রাফি নামের ৬ বছরের শিশুকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন কাদিপুর গ্রামের আবদুল জলিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক একটি স্লিপে একটি সিরাপ লিখে দেন। ওই স্লিপ নিয়ে সরকারি বিতরণ কক্ষে গেলে তাকে মেয়াদোত্তীর্ণ একটি সিরাপ হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে নিয়ে গেলে তার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান ৩ মাস পূর্বে ওই সিরাপের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।

একই অভিযোগ করেন আজিজনগর গ্রামের লোকমান মিয়া। তিনি জানান, তার ভাতিজিকে মেয়াদোত্তীর্ণ এমোক্সিসিলন সিরাপ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার তারা হাসপাতালে ওষুধগুলা নিয়ে আসলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাদের কোনো সদুত্তর না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রেখে বিদায় করে দেন। একইভাবে ৪ঠা অক্টোবর দুপুরে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে বিশ্বনাথ পুরান বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান তার ছেলে আমিনুর রহমানকে নিয়ে হাসপাতালে যান।

তিনি জানান, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এসে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত আমার ছেলেকে দেখে সুই, সুতাসহ সেলাই করার সরঞ্জামাদি বিশ্বনাথ থেকে নিয়ে আসতে বলেন এবং ওষুধপত্র ও সেলাইয়ের সরঞ্জামাদি লিখে একটি স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেন। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে আবার বিশ্বনাথে ফিরে আসি।

এদিকে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর উপজেলার লামাকাজী এলাকায় একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত কয়েকজন রোগী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসকের বদলে ঝাড়ুদার ও আয়া ডাক্তারের ভূমিকায় তাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এমন অবস্থা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যান্য আহতরা অন্যত্র চলে যান।

এছাড়াও গত বুধবার বিকাল আড়াইটার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে দেখা যায় সু-চিকিৎসা না পেয়ে একজন মহিলা তার শিশুপুত্রকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের রুনা বেগম (৩০)। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেটের সামনে তার সঙ্গে কথা হলে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি সাংবাদিকদের বলেন- গত রোববার তার শিশুপুত্র মাহিন (৫)কে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভর্তির পর থেকে সময় মতো ওষুধপত্র, চিকিৎসক এমনকি খাবারও পাওয়া যায়নি।

এরই মধ্যে একজন ডাক্তার তার ছেলের জন্য ওষুধ লিখেন। কিন্তু অপর আরেকজন ডাক্তার গিয়ে বলেন ওই ওষুধ তার ছেলের রোগের জন্য নয়। তাই তিনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবায় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে এবং সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিভাষ চন্দ্র মানিককে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।-এমজমিন

৯ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে