শাহ্ দিদার আলম নবেল : আবদুস সামাদ আজাদ, সাইফুর রহমান, দেওয়ান ফরিদ গাজী, খন্দকার আবদুল মালিক, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুর রইছ আলী— বৃহত্তর সিলেটের এসব রাজনীতিক নিজ গুণেই জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারায় তারা আমৃত্যু জাতীয় পর্যায়ে বৃহত্তর সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
তাদের প্রয়াণে বৃহত্তর সিলেট থেকে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বহীনতার যে করুণ চিত্র দেখা যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে সে চিত্র মুছে যাচ্ছে। সিলেটের পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারীরা। প্রয়াত এসব রাজনীতিকের সুযোগ্য উত্তরাধিকারীরা ক্রমেই আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে জাতীয় পর্যায়েও প্রাধান্য বিস্তার করছেন।
তাদের পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নতুন প্রজন্মের মেধাবীরা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সুনামগঞ্জের আবদুস সামাদ আজাদ। জীবদ্দশায় তিনি ছেলে আজিজুস সামাদ ডনকে রাজনীতিতে টানেননি। তার মৃত্যুর পর ডন সক্রিয় হতে শুরু করেন রাজনীতিতে। সুনামগঞ্জের আঞ্চলিক রাজনীতি ছাড়িয়ে ডন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদকের পদও পান।
সিলেটের খন্দকার আবদুল মালিক ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা ও সাবেক এমপি। তার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন ছেলে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। সিলেট বিএনপির অন্যতম নিয়ন্ত্রক আবদুল মুক্তাদির বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। সাইফুর রহমান ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও একাধিকবার অর্থমন্ত্রী। বাবার দেখানো পথ ধরে রাজনীতিতে মনোযোগী হন সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান করে নেওয়ার পাশাপাশি তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সিভিল কমান্ড্যান্ট হবিগঞ্জের মানিক চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। জনপ্রিয় এই নেতার দেখানো পথে হেঁটেছেন তার মেয়ে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেই সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি। সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফেরা কেয়া ভবিষ্যতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন— এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রইছের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ গড়ে নিয়েছেন ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমন জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে একই পদে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত। এই নেতার দুই সন্তান রাজনীতিতে সক্রিয়। ছেলে দেওয়ান কয়েজ গাজী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং মেয়ে এ জেড রওশন জেবিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় পর্যায় ছাড়াও সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের অনেক নেতা নিষ্কলুষ ভাবচ্ছবি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।
এ ছাড়া ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণসংগঠনগুলোয়। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ধাপে ধাপে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সিলেটের বাম রাজনীতিতে স্বনামখ্যাত শামছুল আলম চৌধুরীর ছেলে শফিউল আলম নাদেল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে এখন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপুল জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতি করে উঠে আসা নাসির উদ্দিন খান, ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, জগলু চৌধুরীর মতো অনেকেই আজ স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে এসব নেতা রাজনীতিতে বাহ্বাও কুড়াচ্ছেন। তাদের দেখে এখন নতুন প্রজন্মও রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, তরুণরাই পারে নেতৃত্বে গতি আনতে। প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও নবীনের কর্মোদ্যম যে কোনো দলকে এগিয়ে নিতে পারে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ক্লিন ইমেজধারী তরুণরা রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠায় নতুন প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে।
তার মতে, রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ইমেজধারী নতুন প্রজন্ম নেতৃত্বে এলে রাজনৈতিক দল ও দেশ উপকৃত হবে। বিডি প্রতিদিন
৩০ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি