চৌধুরী মুমতাজ আহমদ : বিএনপির কমিটি নিয়ে রহস্যের একটি চাদরই যেন মেলে দিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি জমা পড়েছে কেন্দ্রে। সে কমিটিতে কারা থাকছেন, কে কোন পদ পাচ্ছেন- কোনো বিষয়েই স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। কমিটি যে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে তোলা হয়েছে সেটিও জানেন না অনেকেই। বৃহস্পতিবার দুটো কমিটিই জমা পড়ে কেন্দ্রে।
কমিটি দুটো জমা দিতে পকেটে করে ঢাকা নিয়ে যান জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। দুটো কমিটিই এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
জেলা ও মহানগরের কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন সিলেটের বিএনপি নেতাকর্মীরা। প্রায় ১ বছর আগে কাউন্সিল হলেও এতদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছিল না। কিন্তু এখন যখন বাতাসে কমিটি গঠনের খবর ভাসছে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। প্রায় সকলেরই অভিযোগ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তারা কিছুই জানেন না।
এমনকি সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমেরও কোনো ধারণা নেই প্রস্তাবিত কমিটি প্রসঙ্গে। তিনি বেশ হতাশার সুরে বললেন, আমার দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বিভাগের দায়িত্বে থাকার পরও আমি জানি না কমিটিগুলো কত সদস্যবিশিষ্ট, কারা আছেন সে কমিটিতে। যারা কমিটি তৈরি করেছেন ঢাকায় গিয়ে জমা দেয়ার সময়ই শুধু আমাকে জানিয়েছেন যে তারা কমিটি জমা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, তারা নাই বলুন প্রয়োজনে আমি ঢাকায় গিয়ে হলেও কমিটি দেখবো।
কমিটি সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া মিফতাহ সিদ্দিকীরও। তিনি বললেন, কোনো ধরণের আলোচনা ছাড়াই কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। তবে মিফতাহ সিদ্দিকী মনে করেন, লুকোচুরির মাধ্যমে দলকে দুর্বল করার তাদের এ চেষ্টা সফল হবে না। তিনি জানান, মহাসচিবসহ দলের শীর্ষ নেতারা তাদের আশ্বস্ত করেছেন কোনো একপেশে কমিটি তারা অনুমোদন দেবেন না। সকলের অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী কমিটিরই অনুমোদন দেওয়া হবে কেন্দ্র থেকে।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে কাউন্সিলে পরাজিত প্রার্থী সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বললেন, কমিটি গঠন প্রসঙ্গে কেউই আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, আমরা সব সময় রাজপথে থেকেছি, নির্যাতিত হয়েছি কিন্তু সুবিধাভোগীরাই পদ পেয়েছেন। এখন তারাই মেরুদণ্ডহীন লোকদের নিয়ে কমিটি সাজিয়েছেন, আর এ কারণেই কমিটি নিয়ে তারা লুকোচুরি করছেন।
কাউন্সিলে মাত্র ১ ভোটে হেরে যাওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, আমরা সব সময় রাজনীতির মাঠে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আলোচনার ন্যূনতম ভদ্রতা দেখাননি দায়িত্বশীলরা। দলের এ দুর্দিনে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব কাঁধে থাকলেও তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে দলকে আরো বিভেদের দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন। কোনো ধরনের পকেট কমিটির অনুমোদন না দিয়ে কেন্দ্র থেকে সবার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
কমিটি জমা দেয়ার কথা স্বীকার করে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দায়িত্বশীল যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, আলোচনা করেছি। তিনি মন্তব্য করেন, পুরো গ্রাম ডেকে এনে আলোচনার তো কোনো প্রয়োজন নেই। কত সদস্যের কমিটি সেটা অবশ্য স্পষ্ট করেননি নাসিম হোসাইন।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদও কমিটি জমা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন মানবজমিনের কাছে। তবে বিস্তারিত কোনো কিছুই তিনি বলতে রাজি হননি। কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ করেছেন বলে জানান তিনি।
গত বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারি জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আলী আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী হন এমরান আহমদ চৌধুরী ও হাসান পাটওয়ারী রিপন। আর মহানগর সভাপতি নির্বাচিত হন নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বদরুজ্জামান সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মিফতাহ সিদ্দিকী। এমজমিন
২৯ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি