ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : প্রেম করে আবিদা বিয়ে করেছিলেন জুনেদকে। সেই বিয়ে মেনে নেয়নি আবিদার জন্য প্রেমপাগল পাভেল। কৌশলে বাড়ি নিয়ে আবিদাকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। দা ধরা হয়েছিল গলায়। জোরপূর্বক নেয়া হয়েছিল ডিভোর্স কাগজে সইও। টানা ১৪ দিন তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। তবু প্রেমিক জুনেদকে ভুলেননি আবিদা। মুক্ত হয়েই প্রেমিকের হাত ধরে তিনি পাড়ি দিয়েছেন জৈন্তাপুরে।
এখন জুনেদ ও আবিদা একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন। কিন্তু স্বস্তি নেই মনে। পাভেলের কারণে তাদের জীবন বিষিয়ে উঠেছে। দেয়া হচ্ছে প্রাণণাশের হুমকিও। এই অবস্থায় সিলেটের পুলিশ সুপারের শরণাপন্ন হয়েছেন আবিদা ও জুনেদ। আদালতের কাছে জানিয়েছেন আর্জিও। আবিদার বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার নিজ কুরুয়া গ্রামে। আবিদা বর্তমানে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর জুনেদ আহমদের বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার ঘিলাতৈল গ্রামে। তার পিতার নাম রিয়াজ উদ্দিন। জুনেদ ও আবিদার বাড়ি সিলেটের দুটি উপজেলায় হলেও তারা পারস্পরিক সম্পর্কে একে অপরের আত্মীয়।
একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা পরিচিত হয়ে ওঠার পর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আর গোলাপগঞ্জ ও সিলেট শহরে আবিদার ফুফুর বাড়ি থাকার কারণে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরো গভীর হয়। ওদিকে, আবিদার সঙ্গে তার ফুফাতো ভাই পাভেল আহমদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। আবিদাকে পাভেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতিও চলছিল। তবে এ বিয়েতে রাজি ছিল না আবিদা। সে পাভেলকে নয়, ভালোবাসে জুনেদকে। জুনেদই তার জীবনের সব। মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়েছে জুনেদকে। এ কারণে পাভেলের সঙ্গে বিয়েতে রাজি হয়নি। এই অবস্থায় গেল বছরের ৪ঠা অক্টোবর প্রেমিক জুনেদের হাত ধরে ঘর ছাড়ে আবিদা। এরপর তারা ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়েও করেন।
সিলেটের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটও করেন। বিয়ের পর স্বামী জুনেদের সঙ্গে ঘর সংসার করেন আবিদা। পরবর্তীতে আবিদার পরিবার থেকে উদ্যোগ নিয়ে মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি তখন জুনেদ ও তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আবিদাকে নিজ কুরুয়া গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসার পর অত্যাচার চালানো হয়। জুনেদকে ভুলে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু আবিদা এতে রাজি হয়নি। টানা ১৪ দিন তার ওপর চলে নির্যাতন। ওই সময় আবিদার কাছ থেকে একটি ডিভোর্স কাগজে জোরপূর্বক দস্তখত নেয়া হয়। তবে ১৪ দিন পর আবিদা সুযোগ পেয়ে ফের জুনেদের কাছে চলে যায়।
এরপর সে পুরো বিষয়টি জানিয়ে ৪ঠা সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের কাছে আবেদন করেছে। আর গত বুধবার সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে পাভেলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে অভিযুক্ত আজির উদ্দিন, পাভেল, রোকসানা পারভিন রুবি, মাহবুব খানের ওপর সমন জারি করে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া আবেদনে আবিদা আনোয়ার নিজেকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, গত বছরের ৪ঠা অক্টোবর জৈন্তাপুর থানার ঘিলাতৈল গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে জুনেদ আহমদকে তিনি বিয়ে করেছেন। একই সঙ্গে সিলেটের নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে একটি হলফনামা সম্পাদন করেছেন। এই বিয়ের পর তিনি জুনেদকে নিয়ে ঘর-সংসার করছিলেন। এই অবস্থায় গত ১লা নভেম্বর তার ফুফাতো ভাই মারওয়ানুল ইসলাম পাভেল সহ অন্যরা বাড়ি নিয়ে যায়। তারা জুনেদের সঙ্গে বিয়ে মেনে নেয়ার কথাও জানায়। কিন্তু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রচণ্ড ভয় দেখানো হয়। মারধরের পর তার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি কাগজে বিয়ের হলফনামা প্রত্যাহারের সই নেয়া হয়।
আবিদা দাবি করেন গত ২রা নভেম্বর রাতে তার নিজ ঘরে প্রবেশ করে হুমকি দিয়ে, নির্যাতন করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পূর্বোক্ত হলফনামা প্রত্যাহার করার জন্য আরেকটি কাগজে তাদের দস্তখত নেয়, যাতে স্বেচ্ছায় সম্মতি ছিল না। এরপর আসে আজির উদ্দিন, পাভেল, রোকসানা পারভিন রুবি ও মাহবুব খান। এ সময় তারা পাভেলের সঙ্গে বিয়ে বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এক পর্যায়ে তারা মারধরের এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনার পরদিন পাভেল ও অন্য সবাই গলায় ধারালো দা দিয়ে তাকে জবাই করার চেষ্টা করে। তখন চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান। এভাবে ১৪ দিন তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে দাবি করেন আবিদা বেগম।
তিনি বলেন, ১৪ দিন পর তিনি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফের জুনেদের কাছে চলে আসেন। এরপর তারা ৪ঠা জানুয়ারি ফের আরেকটি হলফনামা সম্পাদন করে। এরপর থেকে জুনেদ ও আবিদা এক সঙ্গে বসবাস করছেন। আবিদা জানান, পাভেল তার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছেন। এখন পাভেল তার স্বামী জুনেদকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পাভেল ওসমানীনগর থানায় একটি জিডিও করেছে। এদিকে গত ২৮শে জানুয়ারি পাভেল দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে জৈন্তাপুরের গিলাতৈল গ্রামে আসে। ওখানে আবিদাকে পেয়ে সে জোরপূর্বক অপহরণের চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে পাভেল ও তার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। আবিদা আনোয়ারের ফুফাতো ভাই পাভেল জানান, আমার সঙ্গে আবিদার বিয়ের কথাবার্তা ঠিক ছিল। কিন্তু সে পালিয়ে গিয়ে ভুল করেছে। যার জন্য তাকে খেসারত দিতে হবে। প্রয়োজনে আরো মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি।
ওসমানীনগর থানার ওসি আব্দুল আউয়াল চৌধুরী জানান, ‘আবিদা তার বিয়ের কাবিন, নোটারি হলফনামা সহ সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে যে আবেদন করেছে তা আমাদের হাতে এসেছে। আমরা তদন্তপূর্বক অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়াও আবিদা ও তার স্বামীর নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’ এমজমিন
১০ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি