ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : শফিকুর রহমান চৌধুরী। সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপি’র নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় নির্বাচনের আগে পরোক্ষভাবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন তারা দুইজন।
এ কারণে ভোটাররা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের শেষ নির্বাচনী ট্রায়াল এটি। আর এই ভোটযুদ্ধে শফিকুর রহমান চৌধুরী কিছুটা চ্যালেঞ্জে থাকলেও নির্ভার লুনা। শফিকুর রহমান চৌধুরীর ঘরে বিদ্রোহ রয়েছে। এরপরও নৌকায় অনেক এগিয়ে গেছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। আর নীরব ভোট নিয়ে বসে আছেন তাহসিনা রুশদী লুনা। কয়েক দিন নির্বাচনী ময়দান চষে বেরিয়ে তিনি চলে গেছেন ঢাকায়। আগামী ৬ মার্চ ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ভোট। গতকাল থেকে কিছুটা উদ্বেগ-আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে।
দুই খুনের পর ভোটের মাঠে নেমে এসেছিলো পিন-পতন নীরবতা। শেষ হিসেবের প্রস্তুতি শুরু করেছেন দলীয় প্রার্থীরা। ওসমানীনগরে একক প্রার্থী দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- চেয়ারম্যান পদে তারা ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান ও সিলেট জেলার উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরীর নাম প্রস্তাব আকারে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে আতাউর রহমানকে দেয়া হয় নৌকার মনোনয়ন। আর জগলু চৌধুরীকে দেয়া হয়েছিল ভাইস চেয়ারম্যানের টিকিট। কিন্তু সিলেট আওয়ামী লীগের এ তরুণ নেতা কেন্দ্রের মনোনয়ন মানেননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এতেই প্রাথমিকভাবে হোঁচট খেয়েছে আওয়ামী লীগ।
নিজেদের মধ্যে নির্বাচনী সংঘর্ষে ইতিমধ্যে দুই জনের প্রাণ গেছে। এরপরও দমে থাকেননি শফিকুর রহমান চৌধুরী। নৌকার পক্ষে মাঠে সক্রিয়। শুরু থেকে তিনি আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছেন। আর আতাউর রহমানের পক্ষে সব শক্তি নিয়োগ করে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগও। গতকাল ওসমানীনগর উপজেলায় নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান চৌধুরী সহ সিনিয়র নেতারা নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- ওসমানীনগর নৌকার ভোটব্যাংক। ওই ভোটব্যাংক এখনও অক্ষত। এ কারণে তারা নির্বাচনে নৌকারই জয় ভাবছেন।
ওসমানীনগরে নৌকার জয় হলে জয়ী হবেন শফিকুর রহমান চৌধুরী- এমন সুর এখন উঠেছে নির্বাচনী মাঠে। কারন- সিলেট-২ আসনেই ওসমানীনগর অবস্থিত। এটি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও এম. ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা। গেলো ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে শফিকুর রহমান চৌধুরী মহাজোটের খাতিরে তার আসন জাতীয় পার্টিকে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মাঠ ছাড়েননি। এখন ‘চব্বিস ঘণ্টা’র রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ওই এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন। ফলে মার্কা নৌকা ও নেতা শফিকুর রহমান হিসেবে অনেক বেশি সুবিধা আদায় করবেন আতাউর রহমান।
অপরদিকে- এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনাই ওসমানীনগরে মনোনয়ন দেন সাবেক উপজেলা সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরীকে। দলের একনিষ্ঠ নেতা হিসেবে ময়নুল হকের কদর থাকলেও নির্বাচনী মাঠে তিনি একেবারেই নতুন। আর তাকে প্রার্থী করায় বিএনপি’র ভেতরে প্রথমে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল। কিন্তু এখন বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। কেবলমাত্র গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওসমানীনগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক থেকে পদত্যাগকারী নেতা আতাউর রহমান মানিক বেঁকে বসেছেন। তিনি শুরু থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জগলু চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
তবে- বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- ওসমানীনগরে বিএনপি’রও রয়েছে বিশাল ভোটব্যাংক। এই ভোটব্যাংক দিয়েই সিলেট-২ আসনের এমপি হয়েছিলেন ইলিয়াস আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আবদাল মিয়া। এই ভোটব্যাংক ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে একাট্টা রয়েছে। ফলে মাঠের যুদ্ধে ময়নুল হকও শক্তিশালী। বিএনপি ওসমানীনগরে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচারণায় নামেনি। এক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন ময়নুল হক চৌধুরী। নির্বাচনী প্রচারণাকালে ওসমানীনগরে লুনার সমাবেশে ছাত্রদলের গ্রুপিং কোন্দলে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অনেকটা বিব্রত হন লুনা।
এদিকে, ফাঁকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জগলু চৌধুরী কেবল আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকেই আঘাত করেননি, ফাটল ধরিয়েছেন বিএনপি’র ভোটব্যাংকেও। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষুব্ধ অংশ তার পক্ষে নিরবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ওসমানীনগরের মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোটও টানার সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে জগলুর। এমজমিন
০২ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি