রাহিব ফয়ছল, সিলেট ব্যুরো: নবগঠিত সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদেই বিজয়ী হয়েছেন নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট দুই আসনের সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনীত বিএনপির প্রার্থীরা। এই উপজেলাটি বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। তাই বিএনপির প্রার্থীদের জয়ের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিতই ছিল। তারপরও নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন ইলিয়াসপত্নী।
অন্যদিকে আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দিতে ব্যার্থ হয়। এর মূল কারন হিসেবে রয়েছে সিলেট দুই আসনে দলটির নেতাকর্মীরা সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও লন্ডন আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সমর্থিত দুই ভাগে বিভক্ত।
আওয়ামীলীগ ৫বারের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী আতাউর রহমানকে মনোনয়ন দিলে বেকে বসেন আনোয়ারুজ্জামন চৌধুরীর অনুসারীরা। তারা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নাগরীক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী করেন।
সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী চৌধুরীর বিপরীত মেরুতে অবস্থান এবং নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থী থাকায় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীরাও পড়েছেন বেকায়দায়। প্রথমবারের মতো উৎসবের এ নির্বাচন যেনো দুই চৌধুরীর ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র লড়াইয়ে পরিণত হয়।
তবে প্রথমবারের মতো অনুষ্টিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই মেরুর দুই প্রার্থীর প্রেস্টিজ জড়িত ছিল। গ্রুপিংয়ের কারণে ঘটে হতাহতের ঘটনাও।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান এ নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী। অপরদিকে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী) বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর লোক হিসেবে পরিচিত।
এর আগ পর্যন্ত এ বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরীর আজ্ঞাবহ ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না পেয়ে জগলু চৌধুরী বিদ্রোহী প্রার্থী হন। এ কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার ওপর থেকে চোখ ফিরিয়ে নেন শফিক চৌধুরীও।
এ সুযোগ হাতছাড়া করেন নি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে সমর্থন দিয়ে কাছে টেনে নেন। তৃণমূলে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করলে প্রতিপক্ষ তাতে বাধা দেয়। এতে এলাকায় দলীয় গ্রুপিং বাড়ে।
এ নিয়ে এলাকায় সংঘর্ষ হয়। পরে শুধু আনোয়ার চৌধুরীর অনুসারীদের আসামি করে মামলা করা হয়। সাদিপুর ইউপির সাবেক চেয়াম্যান কবির আহমদকে আটকের পর ওসমানীনগর উত্তপ্ত হয়ে উঠলে এক পর্যায়ে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। যদিও পুলিশ বলছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় রাজনীতিতে।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই চৌধুরীর নেতাকর্মী-সমর্থকরাও বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বিজয়ী দেখতে মাঠে নামেন।
আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তির এ সুযোগ কাজে লাগান বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ময়নুল হক চৌধুরী। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, যদিও দলের নিরঙ্কুশ সমর্থন তার পক্ষে নেই।
প্রথম অবস্থায় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করলেও ইলিয়াস পত্মী লোনা এলাকায় এসে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেন। উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নেতাদের নিয়ে বসলে লোনার সামনেই সংঘাতে জড়ায় তারা। অবশ্য পরবর্তীতে তা মিটমাট হয়।
বিএনপি প্রার্থী ময়নুল হকের পক্ষে বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর ইমেজ এবং শরিক দলগুলোর নিরব ভোট কাজে লাগিয়ে বিজয় নিশ্চত করেন তারা।
০৭ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস