সিলেট থেকে : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলের’ কাছে রোববার সকাল থেকে বেলা চারটা পর্যন্ত দফায় দফায় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। এর মধ্যে অন্তত চারটি বিস্ফোরণ খুবই শক্তিশালী। অভিযানের ব্যাপারে বিকেল পাঁচটার দিকে পাঠানপাড়া জামে মসজিদের কাছে ব্রিফিং করবে বলে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল নয়টা ৫৭ মিনিট, সকাল ১০টা ৭ মিনিট, বেলা ১১টা ৪৩ মিনিট ও বেলা দুইটা ৪১ মিনিটে শক্তিশালী চারটি বোমার বিস্ফোরণ হয় আতিয়া মহল ও আশপাশে; এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ বিস্ফোরণটি ছিল খুবই শক্তিশালী। বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিট থেকে অনেকগুলো গুলির শব্দ শোনা যায়।
১১টা ৪৩ মিনিটের বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকায় থাকা পুলিশের এক সদস্য বলেন, বিস্ফোরণের পর আতিয়া মহলের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে ভবনটি কিছুটা হেলে পড়েছে।
গতকাল শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক, পাড়াইরচক থেকে পীর হবিবুর রহমান চত্বর পর্যন্ত সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও দলবদ্ধভাবে চলাফেরা না করার আদেশ জারি করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, উদ্ধার করা ৭৮ জনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানের বিষয়ে ব্রিফিং করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেদান আল মুসা।
এদিকে জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অভিযানের মধ্যে তার কিছুটা দূরে গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে রক্তাক্ত হামলার পর ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় ওই হামলায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলামসহ নিহত হয় ৬ ব্যক্তি। এ হামলায় আহত হয় আরো ৩০ জন।
শিববাড়ি এলাকার হুমায়ুন রশিদ চত্বর থেকে কদমতলি পয়েন্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। স্থানীয়দের আরও সতর্ক থাকতে এবং অযথা বাসা থেকে বের না হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়: “যেহেতু চেকপোস্টের হামলা বাহির থেকে হয়েছে সেহেতু সতর্ক দৃষ্টি রাখুন চারপাশে এবং অযথা বাসা থেকে বের হবেন না। অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু ফেইসবুকে আপলোড দিবেন না , যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা থাকলে ফেইসবুকে দিবেন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জানান এবং সহযোগীতা করুন।”
ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেখানে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে ওই এলাকার লোকজনকে ঘরের ভেতর বা নিরাপদ জায়গায় থাকতে মাইকিং করছেন সেনাবাহিনীর সদর্যা। কি হচ্ছে তা জানতে অনেকে কৌতুহলবশত ঘরের বাইরে বের হয়ে যেতে পারে, তাই এ মাইকিং করা হচ্ছে।
শিববাড়ির পাশেই জৈনপুর এলাকার বাসিন্দা জুমন খান জানান, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা ও সোয়া ১২টার দিকে দুটি গ্রেনেড বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া থেমে থেমে গুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লোকজনকে রাস্তায় না বের হওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন। আশপাশের এলাকা ও রাস্তায় কোনও লোকজনকে দেখা যাচ্ছে না। সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ আতিয়া মহল ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা চেষ্টার পর ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো। এর মাঝে ৭৮জনকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়।
২৬ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস