সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:৩৩:৩৪

'কিন্তু আমরা সেই পথে যাইনি, উল্টো পথে গিয়েছি'

'কিন্তু আমরা সেই পথে যাইনি, উল্টো পথে গিয়েছি'

সিলেট থেকে : যখন আমরা গিয়েছি, তখনও আইইডি লাগানো ছিল। ওরা যেভাবে আশা করেছিল, আমরা সামনে দিয়ে যাব। কিন্তু আমরা সেই পথে যাইনি। উল্টো পথে গিয়েছি। যে জন্য তারা বুঝতে পারেনি বলে জানিয়েছেন অভিযান তদারককারী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।

রোববার বিকেল ৫টার পর পাঠানপাড়া মসজিদে প্রেস বিফিংকালে তিনি কথা জানান। তিনি বলেন, কমান্ডোরা চরম ঝুঁকি নিয়ে নারী-শিশুসহ ভবনের ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে আনেন। জঙ্গিরা আইইডিগুলো লাগিয়েছিল গ্লাউন্ডফোরে, সিঁড়ি  ও ভবনের ঢোকার পথে। তাই কমান্ডোরা নিচ দিয়ে না গিয়ে পাশের বিল্ডিং থেকে মই লাগিয়ে পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপর নেমেছে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘কমান্ডোরা পাঁচ তলায় গিয়ে চারতলা ব্লক করে দিয়েছে। এরপর পাঁচতলার বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। একইভাবে দোতলা পর্যন্ত তারা এভাবে করেছে। আগে থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম যে, ভেতরে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ আইইডি লাগানো হয়েছে। তাই নিচ দিয়ে না গিয়ে বাইরে থেকে গ্রিল কেটে হোল তৈরি করে ভেতর থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়েছে। যে কারণে আমাদের মনে হয়েছে, এই অবস্থাটা মোকাবিলা করার জন্য জঙ্গিরা প্রস্তুত ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা যখন জঙ্গিদের লক্ষ করে গ্যাস শেল নিক্ষেপ করেছি তখন জঙ্গিদের ভেতরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল। তারা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তখন ফায়ার করে দুই জঙ্গিকে নির্মূল করতে পেরেছি। আমরা নিশ্চিত যে, তাদের মৃত্যু হয়েছে। একজন শরীরে লাগানো সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। আমাদের কোনও সেনাসদস্য হতাহত হননি। আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই নিরাপদে আছি।’

সেনা-কর্মকর্তা ফখরুল আহসান আরও বলেন, ‘এখনও আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি এক বা একাধিক জঙ্গি এখনও ভেতরে আছে। পুরো ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় আইইডি লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরাও যথেষ্ট এক্সক্লুসিভ ফায়ার করেছি। তাই পুরো এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন ভিতরে নড়াচড়া করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের কমান্ডোরা সব ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করছে যেকোনও সাইট থেকে তাদের নির্মূল করার জন্য। অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, কখন এটা শেষ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ভবনটি যেহেতু খুবই ঝুকিপূর্ণ, তাই অপারেশনটা পরিচালনায় বেশ কঠিন হচ্ছে। এজন্য সময়টা একটু বেশি লাগছে। আমাদের প্রাথমিক যে কাজটা ছিল যে বাসিন্দাদের নিরাপদে উদ্ধার করা। এটা আমরা দ্রুত করতে পেরেছি। এরপর আমাদের নিজেদের নিরাপদে রেখে জঙ্গিদের নির্মূল করাই ছিল আমাদের কাজ। তাই আমাদের কোনও তাড়াহুড়ো নেই। সতর্কভাবে কাজ করছি। কমান্ডো সদস্য যারা আছে তারা বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এখনও আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, কতজন জঙ্গি ভেতরে আছে। তবে এক বা একাধিক ভেতরে আছে। তবে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা পুরুষ সদস্য। কোনও নারী সদস্য আছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নন। তবে থাকতে পারে। তাদের কাছে স্মল আর্মস আছে। টার্গেট করছে। এক্সক্লুসিভ আছে। আইইডি আছে। তারা বেশ ওয়েল ইকুইপড। আমরা যে গ্রেনেড চার্জ করছি, তারা উল্টো আমাদের দিকে সেটা ছুড়ে মেরেছে।

এদিকে আতিয়া মহলে প্রায় ৩০ ঘণ্টা আটকে থাকার পর উদ্ধার পাওয়া বিশ্বজিত কুমার দে বর্ণনা করেছেন তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলছেন আতিয়া মহলের দুই তলার একটা ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি থাকতেন। শুক্রবার ভোরের দিকে প্রচণ্ড শব্দ তাদের ঘুম ভাঙ্গে।

এরপর একবার বাইরে বের হয়ে এলে চারদিকে ধোয়া দেখে ভয়ে আবার ঘরে ফিরে যান। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না তারা। বিশ্বজিত বলছিলেন এই সময় হ্যান্ড মাইকে পুলিশের কথা শুনতে পান।

তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের নীচতলায় থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পন করার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, এরপর আমরা বাসার দরজা-জানলা বন্ধ করে প্রায় ৩০ ঘণ্টা বসে ছিলাম। ভয়ে আতঙ্কে গেছে প্রতিটা ঘণ্টা। এরপর শনিবার সকালে শুনলাম আর্মি আসছে।’

আতিয়া ভবনের দুই তলা থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত প্রায় ২৮ টি পরিবারকে উদ্ধারের কাজ শুরু হয় শনিবার সকালে। কিন্তু নীচ তলায় সন্দেহভাজন জঙ্গিদের অবস্থান থাকায় সহজ পথে সিড়ি বেয়ে তাদের বের করা নিরাপদ ছিল না। তাহলে কিভাবে বের হলেন এতগুলো মানুষ?

বিশ্বজিত বলছিলেন, ‘মই তৈরি করে আতিয়া ভবনের পাশে থাকা আরেকটি ভবনের সাথে যুক্ত করা হয়। তারপর এই মই দিয়ে এক এক করে সবাইকে পাশের ভবনের সরিয়ে ফেলা হয়।’ প্রতিটি তলায় ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি বলছিলেন নীচ তলায় একটি ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা রয়েছেন বলে তাদের ধারণা।

তাদের পাশের ফ্ল্যাটের মানুষদের গ্রিল ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানাচ্ছিলেন তিনি। বিশ্বজীত বলেন, ‘সব জিনিস-পত্র বাসায় ফেলে কোন মতে বেঁচে আসছি।’
২৭ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে