সিলেট: টানা তিন দিনেও শেষ হয়নি সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান। সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের এই অভিযান এখনও শেষ করতে পারেনি। গত ২৫ মার্চ রাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনার পর উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক নিয়ে সারাদেশের মানুষ এখন ওই জঙ্গি আস্তানার দিকে তাকিয়ে।
এদিকে ওই অভিযানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দুই জঙ্গি নিহত হলেও সেখানে আরও জঙ্গি অবস্থান করছে। তাই অভিযান শেষ হয়ে যায়নি। সোমবার আবার বাড়িটিতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গত ২৩ মার্চ মধ্যরাতে আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। এরপর বাড়িটির ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ।পরদিন শুক্রবার সকালে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের কয়েকদফা গোলাগুলি হয়।এলাকাটি ঘিরে রেখে পুলিশ ও র্যাবের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। খবর দেওয়া হয়, ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সোয়াত টিমকে।
তবে বাড়িটির ভেতরে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও সাধারণ মানুষ থাকায় সোয়াত তাৎক্ষণিক অভিযানে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। এরপর খবর দেওয়া হয়, সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোকে। তারা অভিযান শুরুর আগে শনিবার ৭৮ জন মানুষকে ওই বাড়িটি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশু।
গত ২৫ মার্চ বিকালে অভিযান শুরু করার পর কয়েকবার বাড়িটির ভেতরে বিস্ফোরণের শব্দ পায় স্থানীয়রা। এর মধ্যেই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আতিয়া মহল নামের ওই ভবনটির আধা কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ের শেষ দিকে পাঠানপাড়া এলাকায় আবারও বোমা হামলা ঘটায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন র্যাবের প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫০ জন। এই বিস্ফোরণের পর অভিযানে কিছুটা সময় বিরতি দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষকে দুই কিলোমিটার দূরে সরিয়ে জায়গাটি রবিবার (২৬ মার্চ) নিরাপদ করা হয়।
বাড়িটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠা সময় গড়ানোর সঙ্গে বাড়ছে। তবে অভিযানে বিলম্বের কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছে, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা বিস্ফোরক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে। এতে ভবনের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালাতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে প্যারা-কমান্ডোদের। জঙ্গিরা ঘটনার পর থেকে থেমে থেমে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। শনিবার আতিয়া মহল নামের ওই ভবনটির আধা কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ের শেষ দিকে পাঠানপাড়া এলাকায় আবারও বোমা হামলা ঘটায় জঙ্গিরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাইরেও নজরদারিতে রাখছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আতিয়া মহলটি বর্তমানে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ঘিরে রেখেছে। তারপরই আরও একটি স্তরে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। এরপর তাদের সঙ্গে সোয়াত, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ কয়েকস্তরে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই এলাকার আশপাশে আরও জঙ্গির অবস্থান রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে। তাই পাশের এলাকাটির সন্দেহভাজন বাড়িগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে, ওই বাড়িতে দ্বিতীয় দিনের অভিযান সম্পর্কে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছেন, তাদের হামলায় দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তবে এখনও সেখানে একাধিক জঙ্গি রয়েছে। ভবনটিতে প্রচুর বিস্ফোরক থাকায় এ অভিযান রবিবারও শেষ করা সম্ভব হয়নি। অভিযান সোমবারও (২৭ মার্চ) চলবে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে, সেখানে এতো সময় কখনও লাগেনি। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালানোর পর সেটি রাতভর ঘিরে রাখা হয়। সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা মাত্র ১৩ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে নেয়। একঘণ্টার মধ্যে সেখানে অভিযান সম্পন্ন হয়।
অন্যদিকে, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় ৯ জঙ্গি থাকা সত্ত্বেও সোয়াত টিম মাত্র একঘণ্টার অভিযানে তাদের নির্মূল করেন। একইভাবে নারায়ণগগঞ্জেও জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গিকে অল্প সময়ের অভিযানেই হত্যা করা হয়।
তবে আতিয়া মহলের চিত্র ভিন্ন। কারণ বাড়িটির দেড়শ’ ফ্ল্যাট, সিঁড়ি, পেছনের জলাশয় এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ছড়ানো-ছিটানো থাকায় প্যারা-কমান্ডোরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এ কারণে অভিযানটি সম্পন্ন হতে বিলম্ব হচ্ছে।
অভিযান বিলম্বের বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পাঁচতলা বাড়িটিতে ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। কক্ষ রয়েছে প্রায় ১৫০টি। এগুলোর দরজা ও বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী বিস্ফোরক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে জঙ্গিরা। তাছাড়া বাড়িটির অন্যান্য পাশে আরও ভবন রয়েছে। সেজন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। এ কারণে সময় লাগছে।’-বাংলা ট্রিবিউন
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস