ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলাদলি ভুলে নৌকা মার্কার পক্ষে সবাইকে এক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সিলেটের আলীয়া মাদরাসা ময়দানে সমাবেশের পর নেতাদের এই নির্দেশনা দিয়ে যান তিনি ।
গতকাল সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, দলের ভেতরে যেসব বিভেদ রয়েছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে অনেকটা মিটমাট হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সব সারির নেতাদের এক কাতারে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চালাবেন তারা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র গঠিত কমিটির নেতারা সিলেটে এলে সব বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
সামনেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সিলেট আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছে নিজ দলের প্রার্থীকে জয়ী করা। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দুটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ বিগত ৯ বছরে সিলেট বিভাগজুড়ে যে উন্নয়ন চালিয়েছে তার বিস্তারিত জনগণের মধ্যে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এমপিদের আরো বেশি জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ গতকাল জানিয়েছেন, ‘নেত্রী সিলেটে এসে আগামী সিটি ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে জনগণের জানমালের ক্ষতি যারা করতে চায় তাদেরও মোকাবিলা করার কথা বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটে এমপিদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা ছিল নেত্রীর। এমপিদের আরো বেশি জনগণের কাছাকাছি গিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের কাছে প্রচারেরও নির্দেশ দেন।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগরের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা নেত্রীর কাছ থেকে মিলেছে। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনে নামার কথা বলে গেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতে, তারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানান কামরান।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরে যাওয়ার পর সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জনসভার দিনই দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও তার ভাষণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ফোরলেনে পরিণত করার কথা বলেছেন। সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও হবে বলে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন।
দুটি মেগা প্রকল্প এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল রেললাইন ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং বোর্ডিং ব্রিজ নির্মাণ সম্পর্কে কোনো ঘোষণা আসেনি। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আগেই এ দুটি প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে সিলেট-আখাউড়া ডাবল রেললাইনের প্রকল্পটি চীনের সঙ্গে চুক্তিতে রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ওই প্রকল্প চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
আর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে রানওয়ে শক্তি বৃদ্ধির জন্য ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প ছাড় দেয়া হয়েছে। এ কাজ শুরু হবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে। পাশাপাশি রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন বোর্ডিং ব্রিজ ও যাত্রী লাউঞ্জ তৈরির বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই এ দুটি প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীকে সিলেট উন্নয়ন সম্পর্কে বলে দিতে হয় না। তিনি নিজ থেকে সব কাজই করাচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকালে সিলেট ছাড়ার একটু আগে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় জানাতে যান। এ সময়ও প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের এক হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেন। আপাতত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মনোযোগ দেয়ার কথা বলেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি গতকাল জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কাজ করতে বলেছেন। সবাইকে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা বলেছেন। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও জনগণের মধ্যে প্রচারের তাগিদ দিয়েছেন।’
বিএনপির নিন্দা: সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন মিথ্যাচার ও অপপ্রচারমূলক বক্তব্যেরও নিন্দা জানান তারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে গদি দখল করে থাকা সরকারের কাছ থেকে মিথ্যার ফুলঝুরি ছাড়া সিলেটবাসী আর কিছুই পায়নি।’
বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘সিলেট বিভাগের উন্নয়নের রূপকার প্রয়াত সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পুরোটাই সিলেটবিদ্বেষী। সিলেটবাসী এই মিথ্যাচারমূলক বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সিলেটে স্বাধীনতার পর যে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে তা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এবং সাইফুর রহমানের হাত দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘সাইফুর রহমানকে অস্বীকার মানে সিলেটকে অস্বীকার। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালের একটি বক্তব্য টেনে এনে বলেছেন, তৎকালিন সময়ে নাকি এম সাইফুর রহমান বলেছিলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে নাকি বিদেশ থেকে সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে যাবে। মরহুম এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে এতবড় অপবাদ সিলেটবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণের শামিল। সাইফুর রহমান জীবিত থাকতে এমন কথা কেউ কোনোদিন বলেনি। যা প্রধানমন্ত্রীর মনগড়া এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য বলে সিলেটবাসী মনে করে।’
বিবৃতিতে তারা সিলেটের উন্নয়ন ও সাইফুর রহমান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি