সিলেট: সিলেট-২ আসনে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের ভোটযুদ্ধের জন্য প্রহর গুণছিলেন দুই শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কিন্তু ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও মনোনয়ন লড়াইয়ে এ আসন থেকে ছিটকে পড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা। এই আসন এবারও ছেড়ে দিতে হয় মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টিকে।
সিলেটের বিভিন্ন আসনে মহাজোটের প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হলেও এ আসনে এককভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াকে ছেড়ে দেয়া হয়। মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে থাকা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হতাশ হন মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে। তাদের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যেকার সকল বাধা-বিভেদ ভুলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেয়ার দাবিতে রাজপথে নামেন।
হয় শফিকুর রহমান, না হয় আনোয়ারুজ্জামান যে কাউকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেয়ার দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে একযোগে সড়ক অবরোধে নামেন দুই নেতার অনুসারীরা। তারপরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদল করেনি; আসনটি উন্মুক্তও করেনি। তাই চরমভাবে হতাশ হয়ে, মনোকষ্ট নিয়েও দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হয় সিলেট-২ আসনের আওয়ামী পরিবার; নির্বাচন থেকে ছিটকে যায় নৌকা।
আবেগের প্রতীক নৌকায় ভোট দিতে না পারায় হতাশা কাটছেই না আওয়ামী শিবিরে। হতাশার ছাপ পাওয়া যায় নির্বাচনী এলাকাতে ঘুরলেই। নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের কোন আমেজ নেই। নেই চায়ের দোকান কিংবা নির্বাচনী কার্যালয়ে আড্ডা। তারা নিজেদের অনেকটা ঘরেই আবদ্ধ করে রেখেছেন। মহাজোটের একক প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী।
প্রতীক বরাদ্দের দিন পর্যন্ত এই আসনে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৭ জন। গত ১৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ এই আসনে নির্বাচনের মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত ও বিএনপি মনোনীত একক প্রার্থী নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ইয়াহইয়া চৌধুরীর দায়ের করা রিটের পক্ষে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশটি আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন।
গত ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে লুনার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। ফলে এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি নিয়ে জটিলতার কারণে নির্বাচন থেকে লুনার ছিটকে পড়ায়- ছিটকে পড়ে আরেক আবেগের প্রতীক ‘ধানের শীষ’। কোনভাবেই বিএনপি পরিবার লুনার ছিটকে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, এটি সরকারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ঘটেছে। সরকার বুঝতে পেরেছে যতোই চেষ্টা করুক না কেন এই আসনে নিজেদের পরাজয় ঠেকানো যাবে না। তাই তারা আইনি মারপ্যাঁচে ফেলে ধানের শীষ প্রতীকের নিশ্চিত বিজয় ছিনতাই করেছে।
আর নৌকা ও ধানের শীষের ছিটকে যাওয়ায় এই আসনের অন্তর্গত নির্বাচনী এলাকা ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলার দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের আমেজে ভাটা পড়েছে। কেউ কেউ বিকল্প প্রার্থীদের পছন্দ করলেও বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা নিজেদেরকে ভোটের মাঠ থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
এমনই একজন সিলেট মহানগর তাঁতীলীগের সদস্য আরশ আলী সুহেল তিনি ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা। নৌকা প্রতীকের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাঠে কাজ করছিলেন। কিন্তু সিলেট-২ আসনে নৌকা মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় তিনি এখন এলাকাতেই যাচ্ছেন না। তিনি সিলেট-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. এ কে এ মোমেনের পক্ষে সিলেট নগরীতে সময় দিচ্ছেন।
অন্যদিকে ওসমানীনগর উপজেলার ছাত্রদল নেতা আকিক আহমদ চৌধুরীও বললেন একইরকম কথা। তিনিও চলে এসে সিলেট শহরে। কাজ করছেন সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের পক্ষে।
এরকম আরও অনেক নেতাকর্মী আছেন দু’টি দলেই। যারা এলাকাতেই যেতে চাচ্ছেন না। নির্বাচনে ভোটও দিতে যাবেন না, এমনটিও বলেছেন কেউ কেউ। একটাই কারণ নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক না থাকা।
এদিকে বুধবার রাতে সিলেট-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খানকে। তিনি উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকা প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল), খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী (দেয়াল ঘড়ি), গণফোরামের মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমির উদ্দিন (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসাইন (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর মো. মোশাহিদ খান (টেলিভিশন)। স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা হলেন মুহিবুর রহমান (ডাব) ও আবদুর রব মল্লিক (কার)।
বিডি প্রতিদিন