ওয়েছ খছরু : দালতের নির্দেশে সিলেটের তারাপুর চা বাগানের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ফিরে পেলেন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত। গতকাল দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেবায়েতের কাছে জমি বুঝিয়ে দেন। এই বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছিলেন সিলেটের ধনাঢ্য ব্যক্তি রাগীব আলী। দখলের পর বাগানের জমি বিক্রি করে গড়ে তোলা হয় আবাসিক এলাকা। নির্মাণ করা হয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হোস্টেল।
শনিবারই জানাজানি হয়ে যায় বাগান উদ্ধারে সিলেটের জেলা প্রশাসন অভিযান চালাবে। এ কারণে সকাল থেকে বাগান এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সিলেটের জালালাবাদ ও বিমানবন্দর থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে পৌঁছেন সেখানে। এই অবস্থায় দুপুরে সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে নিয়ে বাগান এলাকায় যান অভিযান পরিচালনাকারী দলের প্রধান সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. মাহমুদুর রহমান।
তিনি গিয়ে সেবায়েতকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটেই বাগান এলাকা পরিদর্শন করেন। ঘুরে দেখেন বাগান দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনাও। এ সময় তিনি বাগানের ম্যানেজার আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। বলেন, বাগানের হিসাবপত্র বুঝিয়ে দিতে। আতাউর রহমানও প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. মাহমুদুর রহমান বাগান এলাকা পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তারাপুর চা বাগান রাগীব আলীর দখল থেকে ফিরিয়ে আনার অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তারাপুর চা বাগানস্থ মেডিকেল কলেজ, হোস্টেল ও আবাসিক স্থাপনা ছাড়া অন্যান্য ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
অভিযানকালে নগরীর জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন, বিমানবন্দর থানার ওসি গৌছুল হোসেনসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রায় হাজার কোটি টাকার এই দেবোত্তর সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে রাগীব আলীর দখলে ছিল। ওই বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তের পূর্ব পুরুষরা। এ কারণে বংশপরম্পরায় তারা বাগানের সেবায়েত হন। কিন্তু এক সময় পঙ্কজ ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই ভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়, রাগীব আলী প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগান দখল করেছেন। আদালত ৬ মাসের মধ্যে চা বাগানটি দখলমুক্ত করতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেন। একইসঙ্গে চা বাগান ধ্বংস করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনাও দেন আদালত।
শিল্পপতি রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের দায়েরকৃত এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চার বিচারক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ১৯শে জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের রায়ে তারাপুর চা বাগানে গড়ে তোলা আবাসিক প্রকল্প, এ সম্পত্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, এ বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ ১৭টি নির্দেশনা দেয়া হয়। রায়ে বাগানের সব অবকাঠামো ৬ মাসের মধ্যে সরিয়ে সেখানে চা বাগান করার নির্দেশনাও দেয়া হয়। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার অভিযান চালায় প্রশাসন।
আদালতের রায় অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে তারাপুর চা বাগানে গড়ে তোলা রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য আবাসিক স্থাপনা সরিয়ে নেয়া না হলে, অভিযানের মাধ্যমে বাগান দখলমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে বাগান বুঝে পাওয়ার পর সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এই বাগান দেবতার সম্পত্তি। বাগানে একটি মন্দির ছিল। দখলের সময় মূর্তি যুগলটিলায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। তিনি নিজে সেটি করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাগানের সেবায়েত হিসেবে আমি এই বাগানের তদারকি করবো। এখানে অন্য কারও এখতিয়ার নেই। আমার পরে আমার সন্তানরা বাগানের তদারকি করবেন বলে জানান তিনি।’
এদিকে বাগানের ম্যানেজার আতাউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে তেমন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, সরকার যেভাবে সহযোগিতা চাইবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে। -এমজমিন
১৬ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম