শাহ্ দিদার আলম নবেল : সিলেট প্রধান ডাকঘরে তরুণ-তরুণীদের ভিড়। কেউ এসেছেন পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের ফরম জমা দিতে, আবার কেউ এসেছেন ফরম নিতে। হাস্যোজ্জ্বল সবার মধ্যে আমেরিকায় (মার্কিন) যাওয়ার স্বপ্ন। ‘ইউএস গ্রিনকার্ড লটারির আবেদনের ফি (!) জমা দেওয়ার জন্য তারা এসেছেন পোস্টাল ক্যাশ কার্ড (পিসিসি) করতে।
আবেদনের পর পিসিসির মাধ্যমে ৭৯৬ টাকা পরিশোধ করলেই আমেরিকার স্থায়ী নাগরিকত্ব (গ্রিনকার্ড) পাওয়ার পথ সুগম হয়ে যাবে। লটারি জেতার জন্য বাকি প্রসেসিং ফি দিতে হবে কয়েকটি ধাপে। এমন লোভনীয় অফার দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে অনলাইনে। www.greencardvisa.us এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হচ্ছে কথিত এই লটারির।
ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার লোক আমেরিকায় নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে। সুযোগ রয়েছে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাওয়ারও। ওয়েবসাইটির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজনের লটারিতে অংশ নেওয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। তবে ওয়েবসাইটটিতে ইংরেজির পাশাপাশি কেবলমাত্র বাংলা ভার্সন যুক্ত রয়েছে। ওয়েবসাইটে লটারির আবেদনপত্রে রেসিডেন্স নম্বরের জায়গায় পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, রেশন কার্ড বা সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড নম্বর উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
সিলেট প্রধান ডাকঘরে টাকা জমা দিতে আসা দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার সাহেদ আহমদ জানান, অনলাইনে গ্রিনকার্ড লটারিতে অংশ নেওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে আবেদন গৃহীত হওয়ার বার্তা আসে। ই-মেইলে তাকে জানানো হয়েছে আবেদনটি প্রসেসিংয়ের জন্য তার পিসিসি থেকে ৯.৯৯ ডলারের সমপরিমাণ ৭৯৬ টাকা ৭০০৯০-১৩০০-০৬৩২-৯৯৮২৯ নম্বর পিসিসিতে ট্রান্সফার বা ০১৯৫৪৬৩২২২৩ নম্বরে বিকাশ করতে। তাই তিনি টাকা ট্রান্সফারের জন্য ডাকঘরে এসেছেন।
অনলাইনে লটারিতে অংশ নেওয়া বালুচরের লুত্ফুর রহমান জানান, তিনি প্রথম দফায় ৭৯৬ টাকা এবং পরে আরও এক হাজার টাকা পাঠান। তৃতীয় দফায় তার কাছে প্রসেসিং ফি বাবত আরও ১৮ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তখন প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে তিনি আর টাকা পাঠাননি।
অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখা গেছে www.greencardvisa.us ওয়েবসাইটির ডোমেইন ‘US Visa Counsel’ এর নামে মিরাজ হোসাইন নামক এক ব্যক্তি কিনেছেন। তার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ৩৫১০ ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভ এনডব্লিউ, ওয়াশিংটন ডিসি, ইউএস। গত ১১ মার্চ ডোমেইনটি এক বছরের জন্য কেনা হয়। মার্চে ওই ওয়েবসাইটটি চালুর পর থেকে সিলেটে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড করতে আমেরিকায় যেতে আগ্রহীদের ভিড় লেগেই আছে।
পিসিসির দায়িত্বে থাকা সিলেট প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্টমাস্টার আবু সায়েদ জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে মাত্র পাঁচজন গ্রাহক পোস্টাল কার্ড নিয়েছেন। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটটিতে গ্রিনকার্ড লটারির প্রলোভন দেওয়ার পর থেকে পিসিসির চাহিদা বেড়ে গেছে। এখন প্রতিদিন লোকজন পিসিসির জন্য ভিড় করছেন।
কিন্তু ক্যাশ কার্ড না থাকায় সবাইকে কার্ড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, যেখানে বছরের প্রথম ৩ মাসে মাত্র ৫ জন ক্যাশ কার্ডের গ্রাহক হয়েছেন সেখানে ১ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১ হাজার ১৩১ জন গ্রাহক ক্যাশ কার্ড নিয়েছেন। পর্যাপ্ত কার্ড থাকলে আরও কয়েক হাজার গ্রাহক বাড়ত।
আবু সায়েদ আরও জানান, আমেরিকান লটারির জন্য পিসিসির মাধ্যমে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ডাক বিভাগ অবগত নয়। তবে ৭০০৯০-১৩০০-০৬৩২-৯৯৮২৯ পিসিসি নম্বরে সন্দেহজনকভাবে টাকা ট্রান্সফার হওয়ায় ডাক বিভাগ থেকে ওই নম্বরে টাকা ট্রান্সফার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। -বিডি প্রতিদিন
১৭ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস