ওয়েছ খছরু: সাহেবের খোরাক হতে পারেননি নবীগঞ্জের নাজমিনা আক্তার। সতীত্ব রক্ষায় লড়াই করেছেন। এ লড়াইয়ে জিতলেও হেরে গেছেন জীবন যুদ্ধে। হারিয়েছেন মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল। পিতা-মাতা, ভাই-বোন নিয়ে আশ্রয়হীন এখন নাজমিনা অবশ্য সামাজিকভাবে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন। এ নিয়ে কালক্ষেপণ হয়েছে। ঘটনার সময় অতিবাহিত হয়েছে। কোনো সুরাহা হয়নি। অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নাজমিনা। দিয়েছেন মামলা। বর্তমানে তার মামলাটি তদন্ত করছে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। নাজমিনা আক্তার। বয়স ২০ বছর পেরিয়েছে। পিতার নাম জিতু মিয়া। বাড়ি নবীগঞ্জের দীঘলবাঁক গ্রামে। এটা তার মূল বাড়ি নয়। আসল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার দৌলতপুর গ্রামে। কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়েছিলেন জিতু মিয়া। এরপর তিনি আশ্রয় পান দীঘলবাঁক গ্রামের এখলাস মিয়ার বাড়িতে।
এখলাস মিয়া লন্ডন প্রবাসী হওয়ায় শূন্য বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব পান জিতু। আর ওই বাড়িতেই জিতু মিয়া ধীরে ধীরে ঘর সংসার শুরু করেন। বিয়ের পর সন্তানাদি নিয়েও তিনি ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। ক্রমেই প্রবাসী এখলাস মিয়ার পরিবারের আপনজন হয়ে উঠেছেন পেশায় রাজমিন্ত্রী জিতু মিয়া। সুখ-দুঃখ তারা একসঙ্গেই ভাগাভাগি করেন। ঘটনার মূল হোতা এখলাস মিয়ার চাচতো ভাই আলমগীর সরকার। তার বাড়ি এখলাস মিয়ার বাড়ির পাশাপাশি। গত ফেব্রুয়ারির দিকে দেশে আসেন লন্ডন প্রবাসী এখলাস মিয়ার মা। তিনি একা বাড়িতে না উঠে স্বজন আলমগীরের বাড়িতে ওঠেন। ওই বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরা বসবাস করায় তিনি ওখানে ওঠেন। এ কারণে এখলাস মিয়ার মা তার দেখাশোনার জন্য নাজমিন আক্তারকে তার কাছে নিয়ে নেন। দেখাশোনা করা ছাড়াও রান্না-বান্নায় সহায়তা করেন নাজমিনা। বাড়িতে যাওয়ার আসার সুবাদে নাজমিনা আক্তারের ওপর চোখ পড়ে আলমগীরের। নাজমিনা আলমগীরকে ‘দাদাভাই’ বলে সম্বোধন করেন। এ কারণে বাড়িতে একা পেলে আলমগীর প্রায়ই নাজমিনার শরীরের অঙ্গে ঢংয়ের ছলে হাত দিতো।
প্রায় সময় তার সঙ্গে কু-ভঙ্গিমায় কথাবার্তা বলতো। কিন্তু নাজমিনা এসবে পাত্তা দিতেন না। বাড়ির মালিকের মায়ের যত্ন নেয়ায় তিনি ব্যস্ত থাকতেন। মার্চের প্রথম দিকে আলমগীর একদিন একা বাড়িতে পায় নাজমিনাকে। ওইদিন তাকে বাড়ির দোতলার একটি ঘরে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় নাজমিনা চিৎকার শুরু করলে আলমগীর তাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনার পর নাজমিনা তার বাড়ি চলে আসেন। পিতাসহ বাড়ির লোকজনকে ঘটনা জানান। জানিয়ে দেন তিনি আর ওই বাড়িতে কাজ করতে যাবেন না। ঘটনার মূল হোতা আলমগীরের মা ছেলের এ আচরণের জন্য নাজমিনা ও তার পিতার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এরকম ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নাজমিনা ফের আলমগীরের বাড়িতে থাকা লন্ডনী চাচির দেখভালের দায়িত্ব নেন। পরের ঘটনা ৮ই এপ্রিল রাতে। ওইদিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন নাজমিনা। হঠাৎ দেখেন বাড়ি ফাঁকা। আলমগীর একা বাড়িতে। তিনি ভয়ে ভয়ে ছিলেন। এক সময় টেবিলের ওপর আলমগীরকে ভাত খেতে দেন। আলমগীর ভাত খেয়ে নাজমিনাকে নির্দেশ দেয় উপরের ঘর থেকে সিগারেট আনতে। কথামতো নাজমিনা উপরের ঘর থেকে সিগারেট আনতে যান। এমন সময় আলমগীর পিছু পিছু ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। নাজমিনার সাথে মেলামেশা করার তাকে জন্য ঝাপটে ধরেন। ধস্তাধস্তি শুরু করে। এতে নাজমিনার শরীরে থাকা কাপড়ের অনেক অংশ ছিঁড়ে যায়।
নাজমিনা আক্তার জানান, হাত দিয়ে মুখ চাপ দিয়ে ধরার কারণে তিনি চিৎকার করতে পারেননি। এমন সময় নাজমিনার খোঁজে ওই বাড়িতে আসেন জিতু মিয়া। তিনি উঠোন থেকে নাজমিনাকে ডাক দিলে আলমগীর ধস্তাধস্তি অবস্থায় নাজমিনাকে ছেড়ে দেয়। এরপর নাজমিনা দৌড়ে নিচে এসে পিতাকে ঘটনা জানান। এদিকে এ ঘটনায় আহত হয়ে পড়েন নাজমিনা। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তাকে পরদিন নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় বিচারপ্রার্থী হয় নাজমিনার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। অবশেষে নাজমিনা ১২ই এপ্রিল হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলা নং-২৮১/২০১৬।
আদালত নাজমিনার আবেদনটি আমলে নিয়ে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নাজমিনা আক্তারের পিতা জিতু মিয়া জানিয়েছেন, ‘মেয়ের ইজ্জতের বিচার চাইতে গিয়ে আলমগীর তাদের বাড়িছাড়া করেছে। তারা এখন আশ্রয়হীন অবস্থায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, আমি এখন আর আশ্রয় চাই না। মেয়েকে হয়রানি করার বিচার চাই।-এমজমিন
১৮ মে ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ