ঢাকা : পুলিশের ভুলে ছোট ভাইয়ের পরিবর্তে আড়াই বছর কারাগারে কাটিয়ে এলেন বড় ভাই। অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন সিলেটের চাঞ্চল্যকর দিনার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছোট ভাই নুনু মৌলভীর বড়ভাই নূরুল ইসলাম।
পুলিশের ভুলের কারণেই নূরুল ইসলামকে আড়াই বছর জেল কাটতে হলো বলে জানা গেছে।
বিচারপতি আবুবকর সিদ্দিকী ও মোস্তফা জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদালতে নুরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটে থানা পুলিশের ভুলের কারণেই হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছোটভাই নুনু মৌলভীর পরিবর্তে জেল খাটছেন বড়ভাই নূরুল ইসলাম (৬০)। প্রায় আড়াই বছর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি।
নুরুল ইসলামের ভোটার আইডি কার্ড, চেয়ারম্যান প্রত্যায়নপত্রসহ বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত নুরুল ইসলামকে ৬ মাসের জামিন দেন।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দেবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামের আব্দুস সালাম ওরফে সেলাইয়া মিয়ার ছেলে মাদরাসা ছাত্র নজরুল ইসলাম ওরফে দিনাকে খুন করা হয়। তার গলাকাটা লাশ গ্রামের খালের পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে দিনার বাবা বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামিরা ছিলেন অজ্ঞাত। ওই সময় বিয়ানীবাজার থানার ওসি ছিলেন চিরজ্যোতি চাকমা। লাশ উদ্ধারের দিনই পুলিশ মেওয়া পূর্ব জামে মসজিদ থেকে নজরুল ইসলাম ওরফে নুনু মৌলভীকে গ্রেপ্তার করে।
দিনা ছিল মেওয়া মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। নুনু মৌলভীর কাছে প্রাইভেট পড়তো সে। কিন্তু নুনু মৌলভী আটকের পর এলাকার লোকজনের অনুরোধে পরদিন তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনার বেশ কিছুদিন পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু তাহের নুনু মৌলভীসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
১৯৯৯ সালে সিলেটের দায়রা আদালত নুনু মৌলভী, আব্দুস জলিল, আব্দুর রহমান ওরফে সাদ, আব্দুস শহীদ, এনাম উদ্দিন, খলিলুর ও নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন।
এদের মধ্যে নুনু মৌলভী ও এনাম উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। সূত্রের দাবি, এনাম বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছে। নুনু মৌলভী নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।
আত্মগোপনে থেকে তিনি চারটি বিয়েও করেছেন। মেওয়া গ্রামের মোকলেছ আলীর সাত ছেলের মধ্যে নূরুল ইসলাম সবার বড় আর নুনু মৌলভী দ্বিতীয়।
নূরুল ইসলামের বড়ছেলে সারোয়ার জাহান সজীব বলেন, তার বাবা নূরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে সৌদি আরব যান। ১৯৯৮ সালে দেশে ফেরেন।
দেশের ফেরার পর কৃষিকাজ করতেন তিনি। ১৯৯৯ সালে হত্যা মামলায় তার চাচা নুনু মৌলভীর সাজা হয়।
পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ১৭ বার তার চাচা নুনু মৌলভীকে খুঁজতে তাদের বাড়িতে আসে। এ নিয়ে তার বাবা নূরুল ইসলামও বেশ কয়েকবার পুলিশের নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হন।
কিন্তু ২০১৪ সালের ৮ মার্চ পুলিশ নূরুল ইসলামকে দিনা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। আদালত থেকে পাঠানো হয় কারাগারে।
সজীব বলেন, তার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, তার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ। কিন্তু কথা শোনেনি কেউ। তার চাচা নুনু মৌলভী ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার ছগির মিয়া বলেন, নূরুল ইসলাম কারাগারে আসার পরই দাবি করছিলেন তিনি নির্দোষ। হত্যা মামলার আসামি তার ছোটভাই নুনু মৌলভী।
১৯৯২ সালে যখন দিনা খুন হয় তখন তিনি ছিলেন সৌদি আরবে। এরপর বিষয়টি যাচাই করার চেষ্টা করা হয়। নূরুল ইসলামে দাবি অনুযায়ী এ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মুখোমুখি করা হয় (সাজাপ্রাপ্ত ৫ জন বর্তমানে সিলেট কারাগারে রয়েছে)। তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জেল সুপার বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের কিছু করণীয় নেই। নূরুল ইসলামের স্বজনদের জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।
৯ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম