বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬, ০১:১৮:০৬

‘রাজনকে বেছে আর কতদিন চলবেন?’

‘রাজনকে বেছে আর কতদিন চলবেন?’

চৌধুরী মুমতাজ আহমদ: বেঁচে থাকার আকুতি ছোট্ট শিশুটির মুখে। পাষণ্ডরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। সিলেটের ছোট্ট শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বেঁচে থাকার সে আকুতি দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে অগণিত মানুষের চোখে জল ঝরিয়েছিল। তবে রাজন হত্যার বছর ঘুরতে না ঘুরতে নিহত শিশুর পরিবারটির প্রতি আবেগের সেই মাত্রা ফিকে হয়ে পড়েছে। এমনকি সাহায্যের  প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেকেই পিছিয়ে পড়েছেন। রাজন হত্যার ঘটনার পর সারা দেশের বিবেকেই যেন নাড়া পড়েছিল। এ ঘটনায় নিন্দার পাশাপাশি যে যার মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রাজনের পরিবারের প্রতি। সেই সাহায্যের কিছু পৌঁছেছে রাজনের পরিবারে, কিছু মাঝপথেই হাওয়া হয়ে গেছে। রাজনের মৃত্যুর পর অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু এখনো প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেছে।


রাজনের পিতা আজিজুর রহমান জানান, রাজনের মৃত্যুর পরপরই সহায়তা হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির কাছ থেকে পেয়েছেন এক লাখ করে টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছ থেকে পেয়েছেন নগদ ৫০ হাজার টাকা, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের কাছ থেকেও পেয়েছেন একই অঙ্কের টাকা। প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর ৫ লাখ টাকা এখনও পাননি বলে জানান রাজনের বাবা। তবে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে নিয়মিতই পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায় থেকেও রাজনের পরিবার অনেকের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছে। তাদের থাকার ঘরটি তৈরি করে দিয়েছে দাতব্য সংগঠন মদিনাতুল খাইরি আল ইসলামী ইউকে। আবার ব্যক্তি ও সংগঠন থেকে পাওয়া অনেক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনও হয়নি।

রাজনের পরিবারকে শুরু থেকে সহায়তা দিয়ে আসা বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাইদুল ইসলাম দুলাল জানান, ‘জাস্টিস ফর রাজন’র ব্যানারে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের কাছ থেকে উঠানো হয়। সে অর্থ এখনও পাননি রাজনের পরিবার। রাজনের বাবা আজিজুর রহমান জানান, ওলিউর রহমান নামে একজন টাকা না দিয়ে উল্টো তার কাছ থেকে একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে যান। বিষয়টি জানিয়ে ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (নং : ১৯৯) করেছেন। রাজনের পরিবারের প্রতি পুলিশও আগের মতো আর এতটা সমব্যথী নয়। রাজনের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও পুলিশ পাহারা তুলে নেয়া হয়েছে তাদের বাড়ি থেকে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের সময় থেকেই পুলিশ নেই রাজনের বাড়িতে।

রাজনের বাবা বলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও পুলিশ চলে যাওয়ায় একদিকে ভালোই হয়েছে। পুলিশের থাকা-খাওয়াসহ দেখভালের জন্য তাকে বাড়তি চিন্তা করতে হতো। রাজনের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিকেও চলতে দিচ্ছে না পুলিশ। সুযোগ না থাকায় অনুদান হিসেবে পাওয়া অটোরিকশাটির রেজিস্ট্রেশন করানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু পুলিশ এ অজুহাত মানতে চাইছে না। ‘রাজনকে বেছে আর কতদিন চলবেন?’ এমন বাঁকা মন্তব্য করে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাটি পথে নামলেই আটকে দিচ্ছে তারা- এমনটিই বক্তব্য রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আলমের।-এমজমিন

২৯জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে