ওয়েছ খছরু : ঈদ এলেই সিলেটের মার্কেটে ঢল নামে নারী ক্রেতাদের। উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যেও সিলেটের নারীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে করেন কেনাকাটা। কিন্তু গেলো দুই বছর ধরে নারী ক্রেতারা পড়েছেন চরম আতঙ্কের মুখে। মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘নারী ছিনতাইকারীরা’। দেখতে স্মার্ট, তরুণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সিলেটের অত্যাধুনিক মার্কেটগুলো। সুযোগ পেলেই লুটে নিচ্ছে যাত্রীদের সবকিছু। ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন মার্কেট থেকে ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে মহিলা পুলিশ। এসব নারী ছিনতাইকারী ধরতে মার্কেটে মহিলা পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। ওই সব ছিনতাইকারীর আস্তানা সিলেট নগরীর মেন্দিবাগস্থ আলা উদ্দিন ওরফে আলু মিয়ার কলোনি। ইতিমধ্যে আলা উদ্দিনের কলোনিতে নারী ছিনতাইকারীদের আস্তানার সত্যতাও পাওয়া গেছে।
গত এক সপ্তাহে নগরী থেকে তিনজন নারী ছিনতাইকারী ও চোর ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন ব্যবসায়ীরা। ওই তিনজনেরই বসবাস মেন্দিবাগের আলা উদ্দিনের কলোনিতে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ শুকরিয়া মার্কেট থেকে সোমা বেগম (২৭) নামের এক চোরকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেন। আটক সোমা বেগম সিলেট নগরীর মেন্দিবাগস্থ আলাউদ্দিন মিয়ার কলোনির ভাড়াটে।
এর আগে গত ২৫শে জুন জিন্দাবাজার থেকে ওই কলোনির বাসিন্দা নারী চোরচক্রের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন, পপি বেগম ও জামিলা বেগম। এদিকে, নগরীর মেন্দিবাগস্থ আলাউদ্দিনের কলোনির অবস্থান নতুন ব্রিজের দক্ষিণ পাশে। সুরমা নদীর পারে আলা উদ্দিন লম্বা একটি আধাপাকা ঘর রয়েছে। সেই ঘরের পাশে আরো একটি দুতলা বিশিষ্ট ভবনও রয়েছে।
এছাড়াও একই এলাকায় আরো কয়েকটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ওইসব কলোনিতে নারী ছিনতাইকারী ও চিহ্নিত নারী চোরের আস্তানা। সেখান থেকে তারা প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে বা মাজারে এসে চুরি ও ছিনতাই করে থাকে। নিরাপদে থাকার জন্য নারী চোরচক্রের সদস্যরা নগরীর মেন্দিবাগে বাসা ভাড়া নিয়েছে। কারণ সেখানে পুলিশ অভিযান চালালে নারী ছিনতাইকারীরা নৌকা দিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায়।
এছাড়াও আলাউদ্দিনের কলোনির দক্ষিণ দিকে নদীর পার দিয়ে উপশহরে যাওয়া যায় এবং উত্তরদিক দিয়ে নগরীর কালিঘাটে যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে অপরাধীরের নিরাপদ আস্তানাই বলা যায় আলাউদ্দিনের কলোনি।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি জানিয়েছেন, মার্কেটে নিরাপত্তার জন্য মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। তিনি জানান, নারী ছিনতাইকারীরা যেখানেই থাকবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। গেলোবার সিলেটের ঈদ মার্কেটে মহিলা ক্রেতাদের কাছে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল নারী ছিনতাইকারীরা। এসব নারী ছিনতাইকারীরা দলবেঁধে এসে নামে ঈদ মার্কেটে। এরপরও তারা দুজন দুজন করে ভাগ হয়ে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই থাকে বোরকা পরিহিত। আবার তরুণীরা স্মার্ট কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি স্থানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের এনে অসামাজিক কাজে লিপ্ত করে চক্ররা। ঈদ এলে এদেরকেই ছিনতাইয়ের জন্য মার্কেটে ছাড়া হয়। ভিড়ের মধ্যে তারা ক্রেতা-বিক্রেতা যাকেই পাবে তাকে ঝাপটা মারে। এর পাশাপাশি পুরুষদের মার্কেট থেকে পটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নির্জন স্থানে। সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা নারী ছিনতাইকারীর পুরুষ সহযোগীরা সর্বস্ব লুটে নেয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিডিয়া মো. রহমতুল্লাহ জানিয়েছেন, ঈদ এলে সিলেটের মার্কেটে মানুষের ভিড় বাড়ে। আর রাতে বেলাও প্রচুর মহিলা কেনাকাটা করতে আসেন। ক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য যা করা প্রয়োজন এসএমপির পক্ষ থেকে সবকিছু করা হচ্ছে। -এমজমিন
০১ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম