সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪৪:৫৫

সেদিন যা ঘটেছিল সিলেট কারাফটকে

সেদিন যা ঘটেছিল সিলেট কারাফটকে

সিলেট থেকে : কর্মকর্তাদের দূরদর্শিতার কারণে বড় ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেলো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। ঘটনার মূল হোতা ছাত্রলীগ কর্মীদের ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনা গত বৃহস্পতিবারের। সিলেট কারাগারে এদিন ছিল বেশি সংখ্যক গ্রেনেড ও জঙ্গি মামলার আসামিরা। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সামাল দেয়ায় ছিলেন ব্যতিব্যস্ত।

ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুর রহমান থেকে শুরু করে ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীরা ছিলেন ব্যস্ত। এমন সময় কারাগারের ভেতরে আসে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপুর জামিনের কাগজ। ডাক্তার দম্পতির বাসা দখলের ঘটনায় নিপু দীর্ঘ দিন ধরে কারাগারে রয়েছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে নিপুর পক্ষের লোকজন কারাগারের ভেতরে কাগজপত্র পাঠায়। কারাগারের সিনিয়র কর্মকর্তারা নিপুসহ কয়েকজন জামিনপ্রাপ্ত হাজতিকে কারাগার থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলেন।

ওদিকে, নিপুর কারামুক্তিকে কেন্দ্র বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে কারা ফটকে অবস্থান নেয় তার অনুসারী কয়েক শ’ নেতাকর্মী। তারা মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে কারা ফটকে গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছিল। এরই মধ্যে কর্মকর্তারা বারবার ফটকে থাকা কারারক্ষীদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন কারা ফটকের সামনে থেকে ছাত্রলীগকে সরিয়ে দিতে। কয়েকজন কারারক্ষী এসে ছাত্রলীগ কর্মীদের সরে যাওয়ার অনুরোধও জানান। কিন্তু ছাত্রলীগ সরেনি।

ছাত্রলীগের এই মহড়ার মধ্যেই সিলেটের আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে আসা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি সিলেট সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জিকে গউছকে। তাদের সঙ্গে এ মামলার আসামি মুফতি হান্নান সহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে আসা হয় ওই ভ্যানে করে। ছাত্রলীগের অস্থিরতার মুখে তাদের কারা ফটকের অফিস কক্ষে ঢোকানো হয়।

তখন বিকাল সাড়ে ৫টা। দাপ্তরিক জটিলতার কারণে নিপুর জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। কিন্তু তর সইছিল না বাইরে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীদের। তারা স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি বারবার কারাগারের মূল ফটকের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের ভেতরে যেতে দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ের ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী এক সঙ্গে কারা ফটকের প্রধান গেট ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। বাধা প্রদান করে কারারক্ষীরা। শুরু হয় হাতাহাতি।

এমন সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা পরপর কয়েকটি ককটেল সার্চ করে কারা ফটকের সামনে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। এ অবস্থায় কারাগারের ‘পাগলা ঘণ্টা’ বেজে ওঠে। আর পাগলা ঘণ্টা শুনেই কারারক্ষীরা মারমুখী হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীরাই নয় পাগলা ঘণ্টা শুনে পার্শ্ববর্তী কোয়ার্টার থেকে সিভিলে কারারক্ষীরা ছুটে আসেন কারা ফটকে। এসেই দেখেন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। তারাও যোগ দেন সংঘর্ষে। কারারক্ষীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের প্রায় ১৫ মিনিট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের একাংশ জেল রোড হয়ে আবার অপর অংশ বন্দরবাজার অভিমুখে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় এডিশনাল আইজি প্রিজনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ মঈন জানিয়েছেন, দোষীরা কোনো ভাবেই ছাড় পাবে না। আর সাংবাদিকরাও যাতে ক্ষতি পূরণ পান সেটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় কারাকর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ছবি ও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। তারা ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেটের ৮ জনকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছে। -এমজমিন
   
২৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে