সিলেট: কানাইঘাটে পল্লী বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ মেইন লাইনের তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হয়ে অবশেষে দুই হাতই হারাতে হয়েছে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে। শুধু তাই নয়, ডাক্তাররা তার হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেললেও আবারো পচন ধরেছে কনুইয়ের উপরের অংশে।
ফলে, ওসমানী হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে এ মাদরাসা ছাত্র। দুর্ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও আহত ওই মাদরাসা ছাত্রকে দেখতে বা ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন অপসারণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের বাঁশবাড়ী গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল জব্বারের ভাগ্নে স্থানীয় ফাগু সালাফিয়া দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিক আহমদ (১৩) মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতো।
গত ১০ই জুলাই সাদিক আহমদ তার মামা আব্দুর জব্বারের নির্মাণাধীন একতলা ভবনের সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় সিঁড়ির পাশ ঘেঁষা কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতাধীন অনুমান দুই মাস আগে টানানো ঝুঁকিপূর্ণ ৬ হাজার বোল্টের এসটি লাইনে সকাল ১১টায় জড়িয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণ লাইনে জড়িয়ে থাকার পর লাইনটি ট্রিপ করলে সাদিক আহমদ গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে ছিটকে পড়ে। পরে বাড়ির লোকজনের শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মুমূর্ষু অবস্থায় সাদিককে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সাদিকের দুই হাতে পচন ধরলে কনুই পর্যন্ত ডাক্তারা কেঁটে ফেলেন। কিন্তু তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলার পরও বর্তমানে অর্থপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন সাদিকের দুই হাতের কনুইর ওপরের বিভিন্ন অংশের পচন ধরেছে।
সাদিকের মামা মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেছেন, তার ভাগ্নেকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য ডাক্তাররা ভারত অথবা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ১০ জুলাই বিদ্যুতের মেইন লাইনে জড়িয়ে শিশু সাদিকের মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু খবর পাওয়ার পরও কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি বা চিকিৎসাধীন সাদিকের কোনো খোঁজখবর নেননি।
সাদিকের মামা আব্দুল জব্বার এবং ফাগু বাঁশবাড়ী গ্রামের হারুন আহমদ, ইসলাম উদ্দিন, ফখরুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানিয়েছেন, প্রায় ৩ মাস আগে তাদের গ্রামে বিদ্যুতায়নের লাইন টানানো হয়।
ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের সময় মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল জব্বারসহ আরো অনেকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দেয়ার পরও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত না করে তাদের মতো করে লাইন নির্মাণ করে।
ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের ফলে বিদ্যুতের নির্মিত এসটি লাইনগুলো অনেকাংশে ঝুলে পড়েছে, যা অনেকের বাড়িঘর ঘেঁষে যাওয়ায় যে কোনো সময় সাদিকের মতো আরো অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
সাদিকের মর্মান্তিক এ ঘটনার জন্য গ্রামের লোকজন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেছেন, তাদের অবহেলার কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় গ্রামবাসী এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।-এমজমিন
৭ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ