আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৭জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার জের ধরে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলমানদের ওপর চলছে নির্বিচারে হত্যা। মুসলমানদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও মানবিক সংকট এবং নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ‘জাতীয় পর্যায়ে কমিটি’ একটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
গতকাল (সোমবার) মার্কিন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার অনলাইন এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মায়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহারে হত্যা ও তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যূত করা হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ অং সান সু চি তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন।
মায়ানমারের উপদেষ্টা পরিষদের তথ্য কমিটির সদস্য জাউ হিতে দেশটির সংবাদমাধ্যমকে জানান, নতুন তদন্ত কমিটি গঠনে কাজও শুরু হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের উপদেষ্টা পরিষদকে সঙ্গে নিয়ে নতুন কমিটি কাজ করবে।
এদিকে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান শিগগিরই এই অঞ্চল পরিদর্শন করবেন বলে জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় তিনি ইতিমধ্যে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
গতকাল (সোমবার) রাজ্য পরিষদের সদস্য এবং ইসলামিক সেন্টার অফ মায়ানমারের প্রধান আহ্বায়ক আয় লুয়িন সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি নায় পি তাও এবং রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করবেন। রাখাইন রাজ্যের পরামর্শক কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গেলো সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ তিনি ওই এলাকা সফর করেন।
অন্যদিকে, দেশটিতে এমন হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগের পরও গণতান্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত অং সান সুচি চুপ করে থাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার পরও তার নীরবতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে নির্মূলের এমন চক্রান্তের পেছনে তার সমর্থণ রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে দেশটির সীমান্ত পুলিশের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর হামলার পেছনে রোহিঙ্গাদের দায়ী করে সংখ্যালঘু এই মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন চালানো হয়। যা এখনো অব্যাহত আছে।
স্থানটিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, রাখাইনে এপর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় ৮৬ থেকে ৪১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়েছেন দেড় লক্ষাধিক।
তবে মায়ানমার সরকারের দাবি, আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়তে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ২০১২ সালের মাঝামাঝি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেসময় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। গৃহহীন হন অন্তত ১ লাখ মানুষ। যাদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর।
২৯ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর