বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০২:৪২:১১

‘জঙ্গিরা ঘিরে ফেলেছে, আর বাঁচবো না’

‘জঙ্গিরা ঘিরে ফেলেছে, আর বাঁচবো না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘‌অঙ তেই থাংথং লিয়া। অনি বাগবি সুরিয়াইদি...।’‌ বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায়, আমরা আর বাঁচব না। আমাদের জন্য প্রার্থনা করো। এটাই ছিল টেলিফোনে শেষ কথা কাশ্মীরে শহিদ হওয়া ত্রিপুরার সেনা সদস্য চিত্তরঞ্জন দেববর্মার। নাগরোটায় সেনাঘাঁটিতে বুলেটবিদ্ধ হয়ে তিনি স্ত্রী নমিতাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু কথা বলা হয়নি।

স্ত্রী কাছে না থাকায় ফোন রিসিভ করেছিলেন বড় বোন রঞ্জনী। তাই তার সঙ্গেই কথা হয়। তখনও গুলির লড়াই চলছিল জম্মু–শ্রীনগর সড়কে নাগরোটায় ভারতীয় সেনার ১৬৬ মিডিয়াম আর্টিলারি রেজিমেন্টের ক্যাম্পে। এরই মধ্যে চিত্তরঞ্জন বোনকে ফোনে জানিয়েছিলেন, তাদের সেনাছাউনি ঘিরে ফেলেছে পাক–মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ভোররাত থেকেই আক্রমণ চলছে।

চিত্তরঞ্জনের কল্যাণপুরের বাড়িতে ফোন আসে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট নাগাদ। এটাই ছিল তার শেষ ফোন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ কথা বলা। সাধারণত মৃত্যুর আগে আক্রান্ত জওয়ানদের ঘটনাস্থল থেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একবার কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। চিত্তরঞ্জন নিজেও ততক্ষণে বুঝে গিয়েছিলেন, মৃত্যু আর দূরে নয়। তাই বলেই ফেলেছিলেন, আমি আর বাঁচব না।

নাগরোটার সেনা ক্যাম্পে ভোর ৫টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘণ্টা গুলির লড়াই চলে। তাতে দুই অফিসারসহ ৭ সেনা শহিদ হন। পাল্টা আক্রমণে তিন জঙ্গিও নিহত হয়। কিন্তু আক্রমণের মাঝামাঝি সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাড়িতে একবার ফোন করার পর চিত্তর ফোন আর আসেনি। কয়েক ঘণ্টা পরে বিকেলের ফোনে আসে মৃত্যুর খবর। মাত্র ৩৭ বছর বয়সেই জীবনদীপ নিভে যায় বীর জওয়ানের। পাঁচ ভাই–বোনের পরিবারে চিত্তরঞ্জন ছিলেন সবার ছোট। তাই বরাবরই একটু আদুরে ছিলেন। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর যখনই ছুটিতে বাড়ি আসতেন, তাকে নিয়ে ছিল বাড়তি উন্মাদনা। শেষবার বাড়ি এসেছিলেন জুন মাসে।‌ ছোট্ট শিশুপুত্র কুপলাইয়ের বয়স সবে ৮ বছর, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে ইনলাকের বয়সও মাত্র ১২, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। স্ত্রী নমিতার আক্ষেপ কাটছেই না। মৃত্যুর আগে কথা বলতে চেয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু কথা হল না। আর কোনও দিন কথা হবে না দু’‌জনের। ছুটিতে বাড়ি আসবে না দুই শিশু সন্তানের বাবা। বোন রঞ্জনীও ভাইয়ের শেষ কথাটি এখনও ভুলতে পারছেন না ‘‌আমি আর বাঁচব না। আমার জন্য প্রার্থনা করো।’‌ শোকে বিহ্বল গোটা পরিবার। শহিদ ছেলের কফিনবন্দী দেহ আজ বৃহস্পতিবার বাড়ি আসার কথা। সূত্র: আজকাল
০১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে