আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচার গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।
এসময় তিনি মায়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’কে উদ্দেশ্য করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।
মায়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ র্যালিতে অংশ নিয়ে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
রবিবার কুয়ালালামপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সমাবেশে অংশ নিয়ে নাজিব বলেন, ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া মায়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং তার সরকারকে কঠোর বার্তা দিচ্ছে যে, যথেষ্ট হয়েছে, এবার থামেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বিচার গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা বিশ্ব দেখছে এবং এক্ষেত্রে বিশ্ববিবেক নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না।’
সমাবেশে তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে জোর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মায়ানমার সেনাদের নির্মম নির্যাতন ও মানবিক সংকটে সংহতি সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে।
এর আগে, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে মালয়েশিয়াকে নাক না গলানোর আহ্বান জানায় মায়ানমার।
আসিয়ান আঞ্চলিক জোটের মূলনীতি বিষয়ে মায়ানমারের বক্তব্যের জবাবে মালয়েশিয়া বলছে, প্রতিবেশি ও জোটের সচেতন সদস্য হিসেবে মালয়েশিয়া মনে করে, আসিয়ানের সদস্য মায়ানমার সরকারেরও উচিত, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যে, আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাকালীন দেশ হিসেবে এর মূলনীতি সম্পর্কে মালয়েশিয়া ভালোভাবেই সচেতন রয়েছে।
পাশাপাশি মালয়েশিয়া স্মরণ করিয়ে দেয়, তাদের দেশে অন্তত ৫৬ হাজার রোহিঙ্গা এবং প্রতিবেশি অন্যান্য দেশেও অসংখ্য রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আর এটি এখন আর অভ্যন্তরীণ বিষয় নেই, অন্যতম আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলতি মাসে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য সংখ্যালঘু হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর রক্তাক্ত নির্যাতনের অভিযোগ উঠে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাদের অমানবিক নির্যাতনে বাধ্য হয়ে এসব অসহায় রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শবর্তী বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত রোহিঙ্গা, ভয়ংকর নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে ওঠে আসছে।
সাম্প্রতিক নির্যাতনে প্রায় ৩০,০০০ রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ তদন্ত করতে বিদেশি সাংবাদিক, স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের এসব অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে না।
কয়েক প্রজন্ম ধরে এসব রোহিঙ্গারা বার্মায় বসবাস করে আসছে। তারপরেও তাদের নাগরিকত্বকে স্বীকার করা হয়নি। তারা বিবাহ, ধর্মপালন, সন্তান জন্মদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগণ হিসাবে বসবাস করছে।
২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয় এবং এরপর থেকে তারা পুলিশ পাহাড়ায় দারিদ্র্যপীড়িত ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে তারা স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের আন্দোলনকে প্রচন্ডভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে।-ফক্স নিউজ ওয়ার্ল্ড
৪ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর