আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দু’হাজার কেজি ফুলে সাজানো গান ক্যারেজ সবুজ শাড়ি পরা ‘আম্মা’কে নিয়ে গেল সমুদ্র সৈকতে। অজস্র কণ্ঠে আবেগতাড়িত ‘আম্মা ভাজগা’ (আম্মা চিরজীবী) স্লোগান এবং বুক চাপড়ে কান্না! আর গোটা শহর জুড়ে জনসমুদ্র। মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে সমাহিত হলেন জয়ারাম জয়ললিতা।
রেখে গেলেন অগণিত অশ্রুসিক্ত হৃদয়, একটি শোকার্ত রাজ্য, একটি দল এবং অন্যূন ১১৩ কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পদ! সোমবার রাতে ‘আম্মা’র ছবি বুকপকেটে রেখে শোকার্ত ও পন্নীরসেলভমের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে জয়ললিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের একাংশের আপাত নিষ্পত্তি ঘটেছে। বাকি অংশের মীমাংসা রয়েছে এডিএমকে’র সাধারণ সম্পাদক পদে শশিকলার উত্থানে। অন্য প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে জয়ললিতার ব্যক্তিগত সম্পদের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের ঘিরে।
এদিন বিকেলে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জয়ললিতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানও সেই প্রশ্ন এড়াতে পারেনি।
দু’বছর আগে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পেশ করা হলফনামায় জয়ললিতার ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা। একাধিক বাড়ি, খামার, দু’টি টয়োটা প্রাডো এসইউভি-সহ গোটা দশেক গাড়ি, ২১ কিলোগ্রাম সোনা এবং এক হাজার ২৫০ কিলোগ্রাম রুপো (সোনা রুপো তাঁর পোয়েস গার্ডেনের বাসভবন থেকে ১৯৯৭ সালে উদ্ধার হয়েছিল) এবং বিভিন্ন সংস্থায় লগ্নি করা প্রায় ২৮ কোটি টাকা। এছাড়া, ’৯৭ সালেই তাঁর বাড়িতে পাওয়া গিয়েছিল ১০ হাজারের বেশি শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতো, ৯১টি ঘড়ি। দিনে দিনে তার সংখ্যা কমেছে, এমন ইঙ্গিত নেই। কে পাবেন এই সম্পদ?
তবে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন মামলার জেরে উল্লিখিত সোনা এবং রুপো জমা রয়েছে কর্নাটকের সরকারি কোষাগারে। এডিএমকে নেত্রীর প্রয়াণে গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা সেই ৬৬ কোটি টাকা সম্পত্তির মামলাও কার্যত বাতিল হতে চলেছে। ফলে মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত না-হলে সেই সোনা-রুপোর উত্তরাধিকার নিয়েও কাড়াকাড়ি হতে পারে।
তামিলনাড়ুর প্রাক্তন সরকারি আইনজীবী ভি কন্নড়াসনকে উদ্ধৃত করে একটি ইংরেজি সংবাদপত্র জানিয়েছে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোনও মহিলার ক্ষেত্রে মা, স্বামী এবং সন্তানই ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রথম শ্রেণির উত্তরাধিকারী হিসাবে বিবেচিত হন। দ্বিতীয় শ্রেণির উত্তরাধিকারী বাবা, ভাই/বোন ও তাদের সন্তানেরা। জয়ললিতার ভাইপো এবং ভাগনি থাকলেও সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর তালিকায় রয়েছেন দত্তকপুত্র ভি এন সুধাকরণ, দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী শশিকলা। শোনা যাচ্ছে, উইল করে শশিকলা এবং সুধাকরণের মধ্যে সম্পত্তি আগেই ভাগাভাগি করে দিয়েছিলেন জয়া।
জয়ললিতার অসুস্থতা থেকে তাঁর শেষকৃত্য পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহে উত্তরাধিকারের সেই লড়াইয়ের একটা আভাসও পেয়েছেন অনেকে। আচারনিষ্ঠ আয়াঙ্গার ব্রাহ্মণ হলেও (তাঁর কপালের আয়াঙ্গারদের ‘নমাম’ তিলকেই স্পষ্ট) শশিকলা এবং দলের সিদ্ধান্তে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীকে সমাহিত করা হয়। দলের তরফে যুক্তি, যেহেতু পেরিয়ার, আন্নাদুরাই, এম জি রামচন্দ্রনদের সমাহিত করা হয়েছিল ধর্মের তোয়াক্কা না করে, দলীয় সেই প্রথা মেনে সমাহিত করা হল জয়ললিতাকেও।
কিন্তু তামিল রাজনীতিকদের একাংশের মতে, এখানেও সুকৌশলে উঠে এসেছে ‘উত্তরাধিকারে’র বিষয়টি। ধর্মীয় সংস্কার মেনে নেত্রীর মুখাগ্নি হলে, তাঁর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও আত্মীয়কে তা করতে হতো। জয়ললিতার তেমন দুই আত্মীয় তাঁর প্রয়াত ভাই জয়কুমারের দুই সন্তান দীপক এবং দীপা। অসুস্থ জয়ললিতাকে দেখতে দীপাকে অ্যাপোলো হাসপাতালের দেউড়ি পেরোতে দেয়নি পুলিশ। এদিন অবশ্য তিনি রাজাজি হল’এ সবুজ শাড়িতে সাজানো পিসির মরদেহ ছুঁয়ে যান। সমাহিত করার আগে নেত্রীর মরদেহে চন্দনকাঠের গুঁড়ো এবং গোলাপ জল ছিটনোর সময়ে শশিকলার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিই দীপক বলে দাবি করেছে একটি সংবাদ ওয়েবসাইট। কিন্তু শশিকলার পাশে তাঁর উপস্থিতি কার্যত ‘প্রচ্ছন্ন’ই ছিল। -এবেলা।
০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম