আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের উপকূলে উদ্ধার বহুল আলোচিত সিরীয় শরণার্থী নিহত শিশু আয়লান কুর্দির বাবা আবদুল্লাহ কুর্দি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
সম্প্রতি গ্রিসের কস দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওরা দেওয়ার পর সাগরে ডুবে যায় আবদুল্লাহ কুর্দিদের নৌকাটি। ওই নৌকায় তার তিন বছরের শিশুপুত্র আইলানসহ দুই শিশুপুত্র এবং স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন লোক ছিলেন। সাতরে আবদুল্লাহ নিজে বেঁচে গেলেও তার দুই শিশুপুত্র ও স্ত্রীকে হারান। পরে শিশু আয়লানের লাশ ভেসে এসে তুরস্কের উপকূলে আটকে পড়ে।
আয়লানের লাশ উদ্ধার করে তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তুর্কি এক নারী ফটো সাংবাদিকের বদৌলতে বালিতে মুখ করে পড়ে থাকা আইলানের মৃতদেহের ছবি প্রকাশিত হয় বিশ্ব মিডিয়ায়। এর পর এক দিকে শোক আর অন্যদিকে শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে ঝড় বয়ে যায় দেশে দেশে।
শুক্রবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন আয়লান কুর্দির বাবা আবদুল্লাহ কুর্দি। তিনি নিজেই একজন মানব পাচারকারী। ডুবে যাওয়া নৌকাটির চালকও ছিলেন তিনি।
গ্রিসের দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য সেদিন নৌকাটিতে যারা যাত্রী হয়েছিলেন তাদের দলে ছিলেন ইরাকি নাগরিক আহমেদ হাদি, স্ত্রী, ১১ বছরের মেয়ে এবং ৯ বছরের ছেলে। আহমেদ বলেছেন, তাদের নৌকাটি চালাচ্ছিলেন আবদুল্লাহ কুর্দি নিজে। কিন্তু সাগর উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউ নৌকায় আঘাত করতে থাকলে আবদুল্লাহ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত চালাতে শুরু করেন।।
অন্যদিকে আয়লানের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর আবদুল্লাহ অবশ্য দাবি করেছেন তিনি নৌকার আরোহী ছিলেন।
জাওয়াদ নামের আরো এক ইরাকি দাবি করেছেন, ‘আয়লানের পিতা মিথ্যা বলেছেন। আমি জানিনা তিনি কি কারণে মিথ্যা বলছেন। সম্ভবত ভয় পাওয়ার কারণেই তিনি এমনটি করছেন।’
জাওয়াদ আরো জানিয়েছেন, শরণার্থীদের গ্রিসে পৌঁছে দেয়ার জন্য ওই নৌ যাত্রার আয়োজনও করেছিলেন আইলানের পিতা। আবু হুসেইন নামের এক মানব পাচারকারীর কাছ থেকেই তিনি আবদুল্লাহর এই নৌ যাত্রা সম্পর্কে জেনেছিলেন।
জাওয়াদের দেয়া তথ্য স্বীকার করেছেন আমির হায়দার নামের ২২ বছরের এক কুর্দি যুবক। তিনি ইস্তাম্বুল থেকে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি আবদুল্লাহকে তুর্কি ভেবেছিলেন। পরে আবদুল্লাহ তার স্ত্রীর সঙ্গে সিরীয় আরবিতে কথা বলার সময় আমিরের ভুল ভাঙ্গে।
এই নিয়ে রয়টার্স প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার সিরিয়ার কোবানিতে আবদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারা আবু হুসেইনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি।
তবে আবদুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনা রয়টার্সের এই অভিযোগটিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশ ট্যালবয়েট পত্রিকা ‘ডেইলি মেইল’কে সিরিয়া থেকে বলেছেন, ‘ঘটনা ডাহা মিথ্যা। আমি যদি পাচারকারী হতাম তবে অন্যদের সঙ্গে আমার পরিবারকে একই নৌকায় নিতাম না। পাচারকারীদের আমি ঘৃণা করি।’
তিনি ওই নৌ দুর্ঘটনার জন্য অন্য এক তুর্কি পাচারকারীকে দায়ি করেছেন। যদিও তিনি তার নাম উল্লেখ করেননি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস