আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কুখ্যাত হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ অ্যানোনিমাস রক্ত জমে যাওয়ার মতো একটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করে বিশ্বের তামাম মানুষকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ‘প্রস্তুতি’ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া যুদ্ধের জন্য তাদের ‘কৌশলগত অস্ত্রশস্ত্র’ মোতায়েন অব্যাহত রাখার প্রেক্ষাপটে গ্রুপটি এ হুঁশিয়ারি জানাল।
গত রোববার ইউটিউবে দেয়া মাত্র ছয় মিনিটের অশুভ ভিডিও কিপে গ্রুপটি জানায়, ‘কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ শুরুর সব আলামত প্রকাশ পেয়েছে।’ হ্যাকারেরা বিভিন্ন সময়ে তাদের পরিচিত প্রতীক গে ফক্স চরিত্র ব্যবহার করে। এবারো একই চরিত্রের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে এবং পারমানবিক হামলা আসন্ন বলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কথিত হুঁশিয়ারিকে যুদ্ধের ভীতিকর পূর্বাভাস বলে হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
কুখ্যাত রোবটিক কণ্ঠে অ্যানোনিমাস গ্রুপটি বলে, ‘প্রতিটি দেশের কৌশলগত মারণাস্ত্র মোতায়েনকে তারা পর্যবেক্ষণ করছে। তবে বিগত বিশ্বযুদ্ধগুলোর মতো এ যুদ্ধ হবে না। এ যুদ্ধেও স্থলবাহিনী ব্যবহৃত হলে এবারের লড়াই হবে প্রচণ্ড, ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী ও অতি ক্ষীপ্র। এ বিশ্বয্দ্ধু পরিবেশ ও অর্থনৈতিক, উভয় দিক থেকেই বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ ধ্বংসের সৃষ্টি করবে।’
অ্যানোনিমাসের দেয়া তথ্যে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিনিটম্যান-থ্রি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সাথে সম্ভাব্য পরমাণু হামলার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নাগরিকদের প্রতি জাপানি কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারির ঘটনাকে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে চীন তার নাগরিকদের হার্মিট কিংডোম (কোরিয়া) থেকে দেশে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
অ্যানোনিমাস গ্রুপটি বলেছে, ‘এটি হবে আসল লড়াই, যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। তিনটি পরাশক্তি ও তাদের মিত্র দেশগুলো স্ব স্ব পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। এতেই ধরে নেয়া যায় কেমন ভয়াবহ রূপ নেবে যুদ্ধ। অ্যানোনিমাস নিজেকে হ্যাকারদের একটি বিশ্বব্যাপী অনলাইন নেটওয়ার্ক বলে দাবি করে ‘এমন সব তথ্য প্রচার করতে চায় যা সরকারগুলো জানাতে চায় না।’
তারা দাবি করে যে, চীন ও ফিলিপাইনের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া ওই অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে কাজ করছে, কিন্তু তাদের আবেদনে কোনো সাড়া মিলছে না। ট্রাম্প প্রশাসন অস্ট্রেলিয়ার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। দেশটি অস্ট্রেলিয়ায় পালাক্রমিকভাবে এক হাজারেরও বেশি সৈন্য ও সামরিক বিমানের একটি বহর মোতায়েন করেছে। বস্তুত অস্ট্রেলিয়াকে ভারত মহাসাগরের কৌশলগত অঞ্চল বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।
অ্যানোনিমাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জনগণ সবশেষে জানতে পারে, তাই অন্যান্য দেশ কী করছে তা উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে গ্রুপটি গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ায় অবস্থিত দেশটির নাগরিকদের হুঁশিয়ার করে দেয়ার বিষয় উল্লেখ করেছে। ‘এতে মনে হচ্ছে, বাস্তববাদি চীনারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে।’ যুদ্ধ যে আসন্ন তার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ হলো, ট্রাম্প ও ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তের মধ্যকার সাম্প্রতিক আলোচনা। দুই নেতা এক সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউজে উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতি ও অন্যান্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে আলোচনা করেন। দুতার্তে অবশ্য ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী দর্শকদের প্রতি এক ভীতিকর বার্তার মাধ্যমে ভিডিওটির পরিসমাপ্তি টানা হয়েছে : ‘সামনে যা ঘটতে যাচ্ছে তার জন্য প্রস্তুত থাকুন। আমরা অ্যানোনিমাস, আমরা বিরাট বাহিনী। আমরা ক্ষমা করি না, বিস্মৃতও হই না।’-নিউ ইয়র্ক পোস্ট
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস