বিমান তৈরি করে রেকর্ড গড়লেন প্রতিবন্ধী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কেরালার প্রত্যন্ত গ্রাম ইদুক্কি। একটি বোবা-কালা ছেলেকে সকলে 'পোট্টেন' বলত। এই মালায়ালম শব্দের বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় হাঁদাগঙ্গারাম (যে কানে শোনেনা এবং কথাও বলতে পারেনা)। তাকে যতই গালাগাল করাহোক নাকেন সেই সকল শব্দ সাজি টমাসের কানে যেত না। যাবেই বা কি করে, জন্ম থেকেই তো শ্রবণেন্দ্রীয় অকেজো। সেই 'পোট্টেন' সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে আর চেষ্টায় টু সিটার বিমান বানিয়েছেন। তাও আবার বিভিন্ন ব্যবহৃত বা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে। বিমানের নাম দিয়েছেন SAJI X Air-S. খবর এই সময়।
এই বিমান তৈরির মাধ্যমে তার স্থান হয়েছে রেকর্ড বুকে। এখানেই শেষ নয়, এই বিশেষ কৃতিত্বের জন্য ডিসকভারি চ্যানেল তাকে একটি অনুষ্ঠানেও অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছে। এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন বলিউড সুপারস্টার হৃতিক রোশন। কঠিন প্রতিবন্ধকতা জয় করে কি ভাবে করলেন এমন অসাধ্য সাধন? উত্তর দিলেন সাজি-র স্ত্রী মারিয়া।
মারিয়া জানাচ্ছেন, সাজি-র যখন ১৫ বছর বয়স, তখন বাড়ির কাছের একটি খেতে পোকা মারার স্প্রে করার কাজে ব্যবহৃত হত একটি ছোট প্লেন। সেই থেকেই বিমানের প্রতি তার চূড়ান্ত আগ্রহ। এক দিন সে সেখানকার এক পাইলটের কাছে গিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, সে প্লেনের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। সেখানকার এক পাইলট সাজি-কে তার মুম্বাইয়ের বাড়ির ঠাকানা দেয়। এটাও বলেন, যে সে যদি মুম্বাই পৌঁছতে পারে, তবে তিনি যথাসাধ্য তার জন্য কিছু করবেন।
মাস কয়েক বাদেই বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বাইয়ে সেই পাইলটের বাড়িতে হাজির হন সাজি। তার আগ্রহ দেখে সেই পাইলট তাকে বাড়ির কাজের দায়িত্ব দেন এবং বিমান সংক্রান্ত নানা বাই পত্র দিয়ে তাকে পড়াতে আরম্ভ করেন। দীর্ঘ বছরের চেষ্টার পর আজ এই সাফল্য জুটেছে। এই বিমান বানানোর জন্য নিজের সমস্ত পুঁজি সম্বল বিক্রি করেছেন সাজি। কিন্তু বিমানটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উড়ানের ব্যবস্থা কোথাও করা সম্ভব হচ্ছিল না। বিমান বানিয়েও শেষ পর্যন্ত প্রায় হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলে সাজি। সে সময় তিরুঅনন্তপুরমের অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এসকেজে নায়ার তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। কমান্ডার নায়ারের ফ্লাইট ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতেই প্রথমবার আকাশে ওড়ে এই বিমান। পরে তারই সাহায্যে তামিলনাড়ুর মণিমুতারে বিমান ওড়ানোর সুযোগ পান সাজি।
প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষার পর বহুবার সফলভাবে আকাশে ওড়ার পর বছর পঁয়তাল্লিশের সাজি টমাস এই বিমানের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশনে। যদিও সেখান থেকে এখনও সবুজ সংকেত মেলেনি। তার আরও ইচ্ছে, এর পর টুইন ইঞ্জিন এয়ারক্রাফ্ট বানাবেন। সাথে চাইছেন একটা চাকরি। তার আশা, কাজ দেখে যদি কোনও নামী সংস্থা তাকে একটা চাকরি দেয়, তবে একটু স্বচ্ছলভাবে বাঁচতে পারেন সাজি।
২ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�