আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘প্রকৃত ঘটনা বিকৃত করার’ অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে প্রস্তাবিত সংলাপ স্থগিত করেছে সৌদি আরব।
দুই দেশের নেতাদের মধ্যে ফোন কলের একটি খবর প্রকাশ হওয়ার পরপরই শনিবার সৌদি আরবের পক্ষ থেকে নতুন এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
শুক্রবার সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান টেলিফোনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে চলমান বিরোধ নিয়ে আলোচনা করেন বলে উভয় দেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।
দু’নেতার আলাপের পর কাতারের বার্তা সংস্থা কিউএনএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কাতারের আমির এবং সৌদি যুবরাজ, উভয়েই উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) দেশগুলোর মিত্রতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সংলাপে বসে সঙ্কট সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।’
এতে আরো বলা হয়, ফোনে কথা বলার সময় যুবরাজ মোহাম্মদ ‘রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বের কোনো ক্ষতি না হয় এমনভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য দু’জন দূত নিযুক্ত করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন’ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন শেখ তামিম।
কাতারের বার্তা সংস্থার কিউএনএ’র খবর প্রচারের পর সৌদি আরব বিবৃতি প্রকাশ করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে কিউএনএ’র প্রতিবেদন অস্বীকার করে।
সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ’র প্রতিবেদনে সৌদি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘কাতারের বার্তা সংস্থায় যা প্রকাশিত হয়েছে তা কাতারি কর্তৃপক্ষের প্রকৃত ঘটনা বিকৃত করার ধরাবাহিকতা। পরিষ্কার একটি বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জনসম্মুখে প্রকাশ না করার পর্যন্ত কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপ ও যোগাযোগ স্থগিত রাখার ঘোষণা দিচ্ছে সৌদি আরব।’
কাতারের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কিউএনএ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে দুই নেতার মধ্যে ফোনে যোগাযোগ হয়, এর আগে ট্রাম্প শেখ তামিমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের বিরোধ মিটানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার কথা বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি কাতারে অবস্থিত।
গত ৫ জুন সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপর বিশ্বের সবচেয়ে বড় তরল জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ কাতারের সঙ্গে আকাশ ও সমুদ্র পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ওই চার দেশ।
কাতার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে চলছে এবং উগ্রপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করে দেশ চারটি। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কাতার। দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যে বিরোধ অবসানের উদ্যোগ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকে কুয়েত।
কাতার সঙ্কটে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী ট্রাম্প
আলজাজিরা
কাতারের সাথে উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) কয়েকটি দেশ ও মিত্রদের তিন মাস ধরে চলা সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হতে চান বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সফররত কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-সাবাহর সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তার ইচ্ছার কথা জানান।
তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাবো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কাতার ও প্রতিবেশীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মেটাতে কুয়েতের আমিরের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন তিনি। তবে এতে কাজ না হলে তিনি নিজে মধ্যস্থতাকারী হতে চান। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা (কাতার সঙ্কট) খুব সহজেই সমাধান করা যাবে। ট্রাম্প আরো বলেন, এই প্রচেষ্টায় কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন ও মিসর যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বর্তমানে তাদের প্রত্যেকের সাথেই আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, সম্ভবত অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে ভালো।
এ দিকে কাতারের ওপর থেকে উপসাগরীয় চার দেশ অবরোধ তুলে নিয়েছে বলে যে মন্তব্য করেছিলেন শেখ সাবাহ, তার প্রতিবাদ করেছে ওই চার দেশ। কুয়েতের আমির বলেছিলেন, আরব বিশ্বের দেশগুলোর সাথে কাতারের যুদ্ধের যে হুমকি তৈরি হয়েছিল তার অবসান ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছিলেন। শেখ সাবাহ বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটাই যে আমরা যেকোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করেছি।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, কিছু দেশ এখনো বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে অর্থায়ন করছে। এ ক্ষেত্রে একাধিক দেশ দায়ী। কিছু দেশ সন্ত্রাসবাদে বিশাল অর্থায়ন করছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস