মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫২:৫৭

আক্রমণ কতটা রুখতে পারবে এই 'নাগ'?

আক্রমণ কতটা রুখতে পারবে এই 'নাগ'?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের হামলা রুখে দেয়ার জন্য ভারত নতুন অস্ত্র নামিয়েছে। নাম 'নাগ'। সফল হচ্ছিল না ‘নাগ’। বিশাল মরুপ্রান্তর দিয়ে যদি হানা দেয় শত্রুপক্ষের ট্যাঙ্ক, তা হলে রুখে দেবে নাগ-ই। আশা ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর। কিন্তু দিনের বেলায় মরুভূমির ভীষণ তাপমাত্রা ধাঁধা লাগিয়ে দিচ্ছিল চোখে। ছোবল মারতে পারছিল না 'নাগ'।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও অবশ্য হাল ছাড়েনি। আরো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির জন্য অত্যাধুনিক ‘চোখ’ দেয়া হলো নাগকে। তার পরই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে বিধ্বংসী আঘাত হেনেছে নাগের নতুন সংস্করণ ‘প্রসপিনা’। থর মরুভূমির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থানরত পাকিস্তান ট্যাঙ্ক বাহিনীর রক্তচাপ আরো বাড়াবে নাগের এই সাফল্য, বলছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

২০১৫ সালেই ভারতীয় বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল নাগ ক্ষেপণাস্ত্র। অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম) নাগকে ভূমি এবং আকাশ, দুই জায়গা থেকেই ছোড়া যায়। প্রতিপক্ষের ট্যাঙ্কই মূলত এই ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য। লঞ্চিং প্যাড থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে থাকা ট্যাঙ্ককেও নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারে নাগ।

কিন্তু রাজস্থানের মরুভূমিতে ঠিক মতো কাজ করতে পারছিল না এই ক্ষেপণাস্ত্র। দিনের বেলায় মরুভূমি এত গরম থাকে যে, ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেট অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তুর তাপমাত্রা এবং মরুভূমির বালির তাপমাত্রা প্রায় সমান হয়ে যায়। ফলে নাগ ক্ষেপণাস্ত্রের ইমেজিং ইনফ্রারেড সিকার লক্ষ্যবস্তুকে ঠিক মতো চিনতেই পারছিল না। রাতের পরীক্ষায় নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানছিল ক্ষেপণাস্ত্রটি। কিন্তু দিনের বেলায় ব্যর্থ হচ্ছিল। সেই কারণেই নাগ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি আরো অত্যাধুনিক করার কাজে হাত দেয় ডিআরডিও। আরো শক্তিশালী এবং আধুনিক ইনফ্রারেড সিকার লাগানো হয় নাগে। এই নতুন সংস্করণের নাম দেয়া হয় ‘প্রসপিনা’।

গত বছরই প্রসপিনার নৈশ পরীক্ষা হয়েছিল। সফল হয়েছিল ক্ষেপণাস্ত্রটি। এ বছরের জুনে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে চন্দন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে দিনের বেলাই পরীক্ষামূলক ভাবে ছোড়া হয় নাগ। সে পরীক্ষায় প্রসপিনা নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে। ডিআরডিও সূত্রের খবর, এই ভয়ঙ্কর ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রকে বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলি যুদ্ধে লড়তে হয়েছে ভারতকে, সেগুলির মধ্যে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধেই সবচেয়ে বড় ট্যাঙ্ক হানার সম্মুখীন হয়েছিল ভারতীয় বাহিনী। ভারতের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক বাহিনী। প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তান কিছু সাফল্য পেয়েছিল, সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভিতরের শহর ক্ষেমকরণ পর্যন্ত কব্জা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারতীয় বাহিনীর ভয়াবহ আক্রমণে পাকিস্তানের ৯৯টি ট্যাঙ্ক শেষ হয়ে যায়। অন্যান্য সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতি মিলিয়ে ভারতের হাতে সে বার পাকিস্তান ১৬৫টি ট্যাঙ্ক হারিয়েছিল। মোড় ঘুরে গিয়েছিল যুদ্ধের।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যদি সঙ্ঘাত হয়, তা হলে পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে, বিশেষ করে রাজস্থানের বিরাট মরু অঞ্চল দিয়ে বড়সড় ট্যাঙ্ক হানার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তাই ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্থানের মরুভূমিতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সময় নাগ ক্ষেপণাস্ত্র যখন ব্যর্থ হয়েছিল, তখন পাকিস্তানের বাহিনী স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়েছিল। কিন্তু আরো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে নাগ থেকে প্রসপিনা হয়ে উঠে ভারতের এটিজিএম যে ভাবে বিধ্বংসী আঘাত হানতে শুরু করেছে, তাতে পাকিস্তানের স্বস্তি উধাও হতে বাধ্য।

কাশ্মীরি কিশোররা অপরাধী নয় :‌ রাজনাথ

গত এক বছরে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির উপত্যকা। প্রশাসনের চেষ্টায় আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বটে। কিন্তু জম্মু–কাশ্মীরকে এখনো শান্ত করা সম্ভব হয়নি। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে চার দিনের সফরে গিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

গায়ের জোরে যে সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব নয় তা এতদিনে বুঝে গিয়েছেন। তাই অসুখের অব্যর্থ দাওয়াই ঠিক করে দিলেন তিনি। যে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের হাতিয়ার করে উপত্যকায় অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার পক্ষে কথা বললেন তিনি। ১৮ বছরের কম বয়সী কারোর গায়ে অপরাধীর তকমা সেঁটে দেয়া চলবে না বলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলেন। কাশ্মির রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে সোমবার সকালে শ্রীনগরে জরুরি বৈঠক করেন তিনি।

তারপর সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে বলেন, ‘‌১৮ বছরের কম বয়সী কারোর সঙ্গে অপরাধী সুলভ আচরণ করা চলবে না। বরং জুভেনাইল আইনে তদন্ত চালাতে হবে। যত রকমের তদন্তের প্রয়োজন চলুক। কিন্তু বয়সটা মাথায় রাখতে হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের জেলখানায় না পাঠিয়ে জুভেনাইল হোমে রাখার বন্দোবস্ত করা উচিত।’‌

গত বছর জুলাই মাসে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে বিক্ষোভে তেতে উঠেছিল সমগ্র কাশ্মীর। কিছুটা হলেও পরিস্থিতি শুধরেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উপত্যকা একেবারে পাল্টে গেছে বলব না। তবে আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বইকি!‌ ‌উপত্যকায় শান্তি, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই সরকারে মূল লক্ষ্য। তাই প্রয়োজনে বছরে পাঁচবারের বদলে পঞ্চাশবারও এখানে আসতে রাজি আমি। কোনোরকম অঙ্ক কষে এখানে আসিনি আমি। কাশ্মীরবাসীর সমৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন করতে রাজি আছি। বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাই।’

স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় কাশ্মীরবাসীর সমানাধিকারের পক্ষে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তা টেনে আনেন রাজনাথ সিং। অভব্য আচরণ নয়, স্নেহের সঙ্গে কাশ্মীরবাসীকে কাছে টেনে নেয়ার পরামর্শ দেন। ভূস্বর্গে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় থাকে। ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি তাদের সেখানে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কাশ্মিরের পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে