মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৪:৪৪:৫২

সুচির বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে যেসব বিষয়

সুচির বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে যেসব বিষয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরেই সরব বিশ্ব। তবে যার বক্তব্য সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত ছিল বিশ্ববাসীর কাছে, সেই অং সান সুচি ছিলেন প্রায় নীরব।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নীরবতা ভাঙেন মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা। সুচি দাবি করেন, তার সরকার রাখাইন রাজ্যের সকল রোহিঙ্গাকে রক্ষা করছে। এবার মঙ্গলবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তার বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

গত ২৫ আগস্টে রাখাইন রাজ্যে একটি পুলিশ ক্যাম্পে হামলার পর সামরিক অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি। এরপর বিষয়টি নিয়ে কথা না বলায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েন সুচি। তারপর এবারই প্রথম মুখ খুললেন সুচি।

সু চির বক্তব্যে প্রাধান্য পেয়েছে যেসব বিষয়:

১. আনান কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন সুচি।

২. সীমান্ত সুরক্ষায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় মিয়ানমার। সুচি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চাই।

৩. সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন ডি ফ্যাক্টো নেত্রী সুচি।  তিনি বলেন, সব সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের সুরক্ষা দিতে আমরা প্রতিজ্ঞ।

৪. অনেক মুসলমানের বাংলাদেশে চলে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। শরণার্থী হিসেবে যারা বাংলাদেশে গেছে যে কোন সময় তাদের পরিচিতি পর্যবেক্ষণ করে তাদের ফিরিয়ে পুনর্বাসনে নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার।

৫. মুসলমানদের সব বসতি নষ্ট হয়নি দাবি করে রাখাইন পরিদর্শনে কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানান সু চি। তিনি জানান, সহিংস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্ত হবে।

৬. সুচি বলেছেন, কোনোরকম আন্তর্জাতিক চাপাকে ভয় করে না মিয়ানমার। রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানান তিনি।

সুচি'র এ ভাষণ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের মাঝে প্রবল আগ্রহ ছিল। রাখাইন অঞ্চলে সংঘাতের নিরসনের জন্য একটি টেকসই সমাধানের উপর জোর দেন সু চি। কেন এত মুসলিম বাংলাদেশে যাচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ সবটাই শুনতে হবে। রাখাইনে সব পক্ষের নিরাপত্তার পাশাপাশি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।’

মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সুচি বলেন, “অন্যের ওপর দোষারোপ কিংবা দায় অস্বীকার করা মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশ্য নয়। আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি সহিংসতার নিন্দা জানাই। আমরা রাজ্যে (রাখাইন) শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।”

রোহিঙ্গারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবি করে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান বলেন, “আমরা শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা রাখাইনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা শান্তি চাই, ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না।“

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব নেতারা মিয়ানমারে আসুন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, দেখুন কেন রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে স্বীকার করে সুচি বলেন, রাখাইন থেকে মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে তারা (সরকার) উদ্বিগ্ন। তারা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানায়। তবে, বেশিরভাগ মুসলিমই রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালায়নি এবং সেখানে সহিংসতা প্রশমিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সুচি জানান, “১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া সমঝোতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে সুচি সরকার প্রস্তুত।’ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে কফি আনান কমিশনের সব ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন সু চি।

তিনি বলেন, “অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ আছে এবং আমাদের সবই শুনতে হবে। কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগে এই অভিযোগগুলো যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে করা হচ্ছে কি না, তা আমাদের নিশ্চিত হতে হবে।”

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে