আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হায়দরাবাদ হাউসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পাশে বসিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘‘আমি আর বারাক নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা করে থাকি!’’ কথার সঙ্গে কাজের মিল দেখাতে ওই ভবনেরই সবুজ উদ্যানে চায়ে পে চর্চা করেছিলেন দুই নেতা।
সেই ‘বারাক’ আর নেই। কিন্তু কূটনৈতিক শিবিরের মতে, সেই উষ্ণতার ঋণ এখন হাড়ে হাড়ে চোকাতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সে দেশ থেকে ভারতের তেল আমদানি বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে কিছুটা চড়া স্বরেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘‘ভারত শুধুমাত্র জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞাকেই মান্য করে।
কোনো রাষ্ট্রনির্ভর নিষেধাজ্ঞাকে নয়।’’ কিন্তু তার এই মন্তব্য ঘরোয়া রাজনৈতিক শিবিরের দিকে লক্ষ রেখেই করা বলে মনে করা হচ্ছে। কেন না, কৌশলগত মিত্র আমেরিকাকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক তরফাভাবে ইরানের সঙ্গে তেলবাণিজ্য করা নয়াদিল্লির পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। আর তাই ইরান প্রশ্নে ভারতকে ছাড় দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে মোদি সরকারকে।
মাত্র তিন মাসে আগে কথা হয়েছিল, ইরান থেকে তেল আমদানি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে ভারত। সে দেশের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে স্থির হয়, আমদানি দিন-প্রতি দু’লাখ ব্যারেল থেকে বাড়িয়ে ২০১৮-’১৯-এ করা হবে ৩ লাখ ৯৬ হাজার। বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা পরিকল্পনাটিই কার্যত ধসে পড়ল বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে।
এটা ঠিক যে, এর আগের নিষেধাজ্ঞার (২০১৫ সালের আগে) অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শক্তিক্ষেত্রে ইরানের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়েছে সাউথ ব্লক। এই মুহূর্তে ভারত ইরানের তুলনায় ইরাক এবং সৌদি আরব থেকে বেশি তেল আমদানি করে। কিন্তু আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি কী ভাবে সামলানো হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, শুধু অর্থনৈতিক সঙ্কট নয়, ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় মার খেতে পারে ভারত-ইরান কৌশলগত প্রকল্পগুলিও। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য করার জন্য ইরানের চাবাহার বন্দর উন্নয়নে ৮৫ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা ঘোষণা করে বসে রয়েছে দিল্লি। সে সময় আমেরিকা উদার নীতি নিয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছিলেন, আমেরিকা ইরানের মানুষকে নিশানা করতে চায় না। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জমানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেয়ো কট্টর নীতি নিয়ে চলছেন। এ বার চাবাহার প্রকল্প শুধু মন্থর নয়, বন্ধও হয়ে যেতে পারে। ইরান-ভারত ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরটিও ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সাউথ ব্লক।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস