আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এবার খাশোগি পরিবারের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো সৌদি আরব। নিহত সাংবাদিক খাশোগির ছেলে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরই পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দিলো সৌদি সরকার। এদিকে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার বিষয়ক জেনেভা কাউন্সিল শনিবার সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, খাশোগির পরিবারের সদস্যদের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্ববান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জেনেভা কাউন্সিল আল খালিজ অনলাইনকে পাঠানো বিবৃতিতে বলেছে, খাশোগি পরিবারের ওপর রিয়াদ কর্তৃপক্ষে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা জানায়। তার সন্তান সালাহকে গত মঙ্গলবার সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজের সামনে হাজির হতে বাধ্য করা হয়েছে। বাদশাহ ও যুবরাজ সমবেদনা জানিয়েছেন পিতৃহারা সালাহকে।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক ঘোষণা লঙ্ঘন করেছে সৌদি সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে বসবাস ও চলাফেরার স্বাধীনতা রয়েছে। দেশ ত্যাগ বা দেশে ফেরার স্বাধীনতাও রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের।
গত ২ অক্টোবর ইস্তম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে আর বের হননি ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তিনি নিহত হয়েছেন এমন খবর প্রকাশ হলেও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বলা হয় খাশোগি কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে গেছেন। কিন্তু তদন্তে বের হয়ে আসে যে খাশোগি কনস্যুলেট থেকে বের হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে বিভিন্নি মিডিয়ায় গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ হয় যে, খাশোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে।
তুর্কি পুলিশের তদন্তেও ক্রমশ উন্মোচিত হতে থাকে রহস্য। এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দুই সপ্তাহ পর সৌদি আরব শিকার করে যে, খাশোগি কনস্যুলেটের ভেতরে হাতাহাতির এক পর্যায়ে নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের সেই স্বীকারোক্তি হালে পানি পায়নি। তদন্তে জানা যায়, ঘটনার দিন সৌদি আরব থেকে ইস্তাম্বুল যাওয়া ১৫ সদস্যের একটি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটনায়। অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যার পর খাশোগির শরীর টুকরো টুকরে করে ব্যাগে ভরে দূতাবাস থেকে বের করা হয়। তবে সেই লাশের খোজ এখনো পাওয়া যায়নি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ওই সাংবাদিককে হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। গত মঙ্গলবার তুরস্কের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ‘নগ্ন সত্য’ প্রকাশ করতে গিয়ে এ কথা বলেছেন এরদোগান।
এরদোগান তার ওই বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘তিন সদস্যের একটি সৌদি দল হত্যাকাণ্ডের এক দিন আগে ইস্তাম্বুল আসে। তারা ইস্তাম্বুল ও ইয়ালোভার বনাঞ্চলেও গিয়েছিলো।’ তিনি বলেন, আরো দুটি পৃথক দলে ভাগ হয়ে কনস্যুলেটে আসে হত্যাকারীরা।
এরদোগান বলেন, ‘সৌদি কনস্যুলেটের ক্যামেরাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। হার্ড ডিস্ক থেকে সব ভিডিও ও ছবি সরিয়ে দেয়া হয়। খাশোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বেড়িয়ে গেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সৌদি সরকার এই ঘটনার কথা ৪ অক্টোবর অস্বীকার করে, কনসাল জেনারেল রয়টার্সের এক সাংবাদিককে আমন্ত্রণ করে দেখানোর চেষ্টা করে যে কিছুই ঘটেনি সেখানে’।
তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানাই খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ইস্তাম্বুলেই বিচারের আওতায় আনার
সুযোগ দিতে।’