সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯, ০৫:৫০:৫৯

‘চোখের বদলে চোখ’ নিতে চায় আরাকান আর্মি!

‘চোখের বদলে চোখ’ নিতে চায় আরাকান আর্মি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাখাইনের সায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রামরত আরাকান আর্মির প্রধান টুন মিয়াট নায়েং মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারকে ‘চোখের বদলে চোখ’ নীতি অবলম্বন করে প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারির কথা জানিয়েছেন। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই হুঁশিয়ারি জানান। ১৭ জানুয়ারি সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

রাখাইনে কোনও শহর দখল করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আরাকান আর্মির প্রধান বলেন, রাখাইনে আমাদের উপস্থিতির সমালোচনা করছে সেনাবাহিনী। নিরাপত্তার ঝুঁকিসহ বেশ কিছু অজুহাত তারা দেখাচ্ছে। মুসলিমদের সঙ্গে যদি আমাদের বড় কোনও সমস্যা থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটাকে অজুহাত করে আমাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করবে। কিন্তু মুসলিমদের সঙ্গে আমাদের কোনও সমস্যা না থাকার পরও তারা আমাদের আরসা’র সঙ্গে জড়িয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। আমাদের যা করার আমরা তা করব।

রাখাইনে হুমকি দিয়ে বুলেট মুড়ে চিঠি প্রেরণ প্রসঙ্গে টুন মিয়াট বলেন, চিঠির ভেতরে বুলেট শুধু শুধু হুমকি না। আমরা সত্যিকার অর্থেই তা বাস্তবায়ন করব। আমরা যা বলব তারা যদি তা না করে তাহলে তাদের হত্যা করা হবে। তারা একটি স্বাধীনতার সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতক এবং দাস মনোভাবের মানুষ। আমাদের হুঁশিয়ারিতে তাদের সতর্ক হওয়াই ভালো। যদি তা না হয়, তাহলে আমাদের যা করা দরকার আমরা সেটাই করব।

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার দাবি করে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে আরাকান আর্মির দুটি ঘাঁটি রয়েছে এবং আরসার সঙ্গে জুলাই মাসে বৈঠক করেছে। সরকারের এই দাবি অস্বীকার করে টুন মিয়াট বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কোনও ঘাঁটি নেই। মাঝে মধ্যে সীমান্তের ওপার থেকে খাবার সংগ্রহ করা হয়। আমাদের মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই। কোনও দেশই তার ভূখণ্ডে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অবস্থান করতে দেবে না। এগুলো সরকারের একটা অভিযোগ মাত্র।

আরকান আর্মির বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার ব্যবহারে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পর বুথিডাউং শহরের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিদ্রোহীবাহিনীর নেতা বলেন, ২১ ডিসেম্বর অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পর থেকেই এমনটা আমরা আশঙ্কা করছিলাম। কিন্তু আমরা ভাবিনি যে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এটার সঙ্গে জড়িত হবে। ফলে দেখতেই পারছেন এনএলডি সরকারের জাতীয় পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচির অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা দেখেছি সেনারা আকাশ ও সড়ক পথে আসছে। ফলে আগামী দিনের সংঘর্ষগুলো হবে ভয়াবহ।

মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবস ৪ জানুয়ারি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার বিষয়ে আরাকান আর্মির প্রধান বলেন, আমাদের হামলার আগে কী ঘটেছিল ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ভূমিকা জানতে হবে আপনাদের। ৪ জানুয়ারির আগে রাথেডাউং, বুথিডাউং, কিয়াকতাউ ও পোন্নাগিন এলাকায় সংঘর্ষ হচ্ছিল। ওই সময় ব্যাপক সংখ্যক সেনা আসে বুথিডাউং থেকে এবং রাথেডাউং ও কিয়াকতাউয়ে বড় ধরনের হামলা চালায়। তারা আমাদের খাবার সরবরাহের সব পথ বন্ধ করে দেয় এবং সামরিক চাপ সৃষ্টি করে। তারা গ্রামবাসীদের গ্রেফতার করে তাদের ফাঁড়ির চারপাশে রাখতেছিল। আমি বলতে চাইছি, তারা আমাদের হামলার শিকার হলে গ্রামবাসীদের মানবঢাল হিসেবে করছে। পালেতওয়াতে এমনকি রাতেও মর্টার হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে ছোড়া গোলা বনে ও অন্যান্য স্থানে পড়েছে। তারা গুলি করতে পেরেছে এটা রাখাইন বলে। কিন্তু এটা যদি অন্য বামার রাজ্য হতো তাহলে একজন বামারকে হত্যার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করত। এটা বর্ণবাদী বৈষম্যের প্রমাণ। আমাদের বিরুদ্ধে হামলায় পুলিশ জড়িত হোক এটা চাই না। তাই আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি। কিন্তু তবু সেনাবাহিনীর ‘ফোর কাট’ কৌশল বাস্তবায়নে তারা জড়িত ছিল।

আরাকান আর্মির প্রধান বলেন, বিজিপির কাঠামো অনুসারে তাদের ৩ হাজার সেনা রয়েছে এবং তাদের আছে জি৩,জি৪ অস্ত্র। তাদের অস্ত্র শক্তিশালী হওয়ার পর একটি ফাঁড়িতে কয়েক লাখ গুলি ও গ্রেনেড ছিল। এমনকি প্রতিটি ব্যাটালিয়নের ৭০ শতাংশের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং এগুলোর নেতৃত্ব সেনাবাহিনী থেকে কর্মকর্তাদের। তাদের সবকিছুই এখন সেনাবাহিনীর মতো। ৪ জানুয়ারির আগে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে সেনারা আমাদের চাপে ফেলার চেষ্টা করছিল। এতে জড়িত ছিল বিজিপি। ফলে যুদ্ধের প্রকৃতি অনুসারে যা করা দরকার ছিল আমরা তা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এটা করার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান সঠিক। আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দেখতে চাই না। আমাদের আরাকানিজদের নিপীড়ন করা হলে তা আমরা সহ্য করব। যে ব্যাটালিয়ন আমাদের গ্রামে হামলা চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করেছি। যে পুলিশ ব্যাটালিয়ন হামলায় ছিল তাদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা তা ভুলে যাব না। আমরা প্রতিশোধ নেব।

পুলিশ ফাঁড়িতে হামলাকে কৌশলগত বলেও উল্লেখ করেন টুন মিয়াট। তিনি বলেন, সেনারা এক জায়গায় জড়ো হয়ে তাহলে যেখানে তারা অনুপস্থিত সেখানে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। আমরা কৌশলগতভাবে সঠিক।

চলমান পরিস্থিতি অনুসারে ২০১৯ সালে রাখাইনে শান্তির কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেছেন আরাকান আর্মির প্রধান।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে