আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছোট্ট কক্ষে একটানা দুই রাত আরও ৩০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাটিয়ে দিলেন জুনাইদ আইয়ুব রাদার। বাইরে সংঘবদ্ধ একদল লোক তাদের বিরুদ্ধে অবিরাম স্লোগান দিচ্ছে। অবশেষে এই যুবকসহ কক্ষের সবাই পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হলেন কাশ্মীর হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ভারতীয়দের আক্রোশ থেকে।
ভারতজুড়ে এমন দৃশ্য এখন অহরহ। ভূস্বর্গ বলে পরিচিত হিমালয় অঞ্চলটিতে সাম্প্রতিক হামলার পর বিভিন্ন রাজ্যে বাস করা কাশ্মীরিরা প্রতিশোধ থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই হামলায় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ জওয়ান নিহত হন।খবর এএফপির।
জুনাইদ বলেন, দেরাদুনের কাশ্মীরি লোকজন ভাড়া থাকেন এমন হোটেল, অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে ক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হন। তারা আমাদের প্রতারক ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, পালিয়ে কাশ্মীরের শ্রীনগরে চলে আসতে আমাদের চারদিন সময় লেগেছে। পুলিশ ও মুসলমান ব্যবসায়ীরা আমাদের পালাতে সহায়তা করেছে।
বছর দুয়েক ধরে তিনি দেরাদুনে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি বলেন, একটি কক্ষে আমরা ৩০ জন জড়ো হয়েছিলাম। সবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলাম। নিরাপদে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নিজেদের বাড়িতে আমাদের আশ্রয় দেন।
প্রতি বছর নিজ রাজ্যের বাইরে ১১ হাজার কাশ্মীরি শিক্ষার্থী ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু পুলওয়ামার ঘটনার পর সহিংস হামলার শিকার হওয়ার আতঙ্কে তারা দলে দলে নিজ রাজ্য কাশ্মীরে চলে যাচ্ছেন।
গত তিন দশক ধরে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরিদের বেধড়ক মারধর ও ভর্ৎসনা করা হচ্ছে।
কাশ্মীরের ব্যবসায়ী ও উৎপাদক ফেডারেশনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াসিন খান বলেন, আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শতাধিক ব্যবসায়ী কাশ্মীরে ফেরত চলে এসেছেন। কেউ কেউ পথে আছেন।
হামলা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে অসতর্ক মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে ভারতীয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু কাশ্মীরি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেউ কেউ রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার শিকার হয়ে কারাগারে ঢুকেছেন।
কাশ্মীরিদের রক্ষায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করলেও রাজনৈতিক নেতারা কাশ্মীরবিরোধী সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছেন।