আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই প্রথম বার ইসলামিক দেশ গুলির সংগঠন অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো অপারেশন এবং সংযুক্ত আরব আমির শাহীর উদ্যোগে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কে তাদের সম্মেলনে সাম্মানিক অতিথি হিসাবে যোগ দান করার আহবান জানান।
এর আগে ভারত কখনো এই সংগঠনের তরফে আমন্ত্রণ পাননি। সাম্প্রতিক ভারত পাকিস্তান টানাপোড়েনের মধ্যে এই আমন্ত্রণ বিশেষ তাত্পর্য্যের বলে মনে করছে ভারতীয় কূটনেতিকরা।
র্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো অপারেশনের বিদেশ মন্ত্রীদের ৪৬ তম পরিষদীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এই পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ১৮৫ মিলিয়ন মুসলিমের দেশ ভারতবর্ষে বহুত্ববাদী স্বর বজায় রাখতে তাদের যে অবদান, এবং ইসলামি দুনিয়ার প্রতি ভারতের যে আবেদন, এই আমন্ত্রণ তারই স্বীকৃতি।
মার্চ মাসের ১ ও ২ তারিখ আবুধাবিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সুষমা স্বরাজকে ‘গেস্ট অফ অনার’ হিসেবে এ বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিদেশমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
কোথায় ওআইসি-র মাহাত্ম্য : ওআইসির আগের নাম ছিল ইর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স। রাষ্ট্রসংঘের পর এটিই আন্তঃসরকার সবচেয়ে বড় কোনও সংস্থা। মোট চারটি মহাদেশের ৫৭টি দেশ এই সংস্থার সদস্য। ওআইসি নিজেদের মুসলিম দুনিয়ার যৌথ কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজের পরিচয় দেয়। এবং তাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক শান্তি এবংদুনিয়ার বিভিন্ন মানুষদের মধ্যেকার সংহতি বজায় রাখার সঙ্গে মুসলিম দুনিয়ার স্বার্থ রক্ষা করা।
যেসব দেশে মুসলিম সংখ্যাধিক্য রয়েছে, তারাই কেবলমাত্র ওআইসির সদস্য হতে পারে। রাশিয়া, থাইল্যান্ড এবং আরও কয়েকটি ছোট দেশ ওআইসির পরিদর্শক হিসেবে রয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ৪৫ তম বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলনে উদ্যোক্তা দেশ বাংলাদেশ ভারতকে পর্যবেক্ষক করার কথা বলে। ভারতে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বাস করেন। কিন্তু পাকিস্তান সে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল।
এই প্রথমবার সম্মেলনে ভারত গেস্ট অফ অনার হিসেবে আমন্ত্রিত হচ্ছে। বিশেষ করে এমন একটা সময়ে যখন পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে এ দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ। সে দিক থেকে এই আমন্ত্রণপ্রাপ্তিকে কূটনৈতিক স্তরে ভারতের পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ জয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ২০১৭ সালে সৌদি আরবের যুবরাজ এ দেশের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সেবারই প্রথম কোনও বিদেশি অতিথিকে এই বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়।
সাধারণভাবে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষই নিয়ে এসেছে ওআইসি। এমনকি কাশ্মীরে ভারতীয়দের “নিপীড়ন“ বিষয়েও মুখ খুলে বিবৃতি দিয়েছে তারা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসেই এক বিবৃতিতে ওআইসি-র সাধারণ সম্পাদকমণ্ডলী “কঠোর ভাষায় ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ কাশ্মীরিদের হত্যার বিরোধিতা“ করা হয়েছে।
এবং আন্দোলনকারীদের ওপর “সরাসরি গুলিচালনা“র ঘটনাকে “সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ“ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি ওআইসি-র সেক্রেটারি জেনারেসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরেই এই বিবৃতি জারি করা হয়েছিল।
বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়েছেন বটে, এবং ভারতের সঙ্গে ওআইসির প্রায় সমস্ত সদস্য দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালও। তা সত্ত্বেও মার্চের ২ তারিখ ওআইসির সম্মেলন শেষের দিন জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ওআইসি কী বিবৃতি দেয়, সে দিকে নজর থাকবে সকলেরই।
আমিররাতের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে আবুধাবির বৈঠকে মুসলিম দুনিয়ার শান্তি ও সুস্থিতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। ওই রিপোর্টে ভারতকে বন্ধু দেশ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ওআইসির মঞ্চে পাকিস্তান যে ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে, সে নিয়ে সন্দেহ নেই।