সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ১২:৪৩:৫৫

নরেন্দ্র মোদির কাছে ‘শান্তির সুযোগ’ চাইলেন ইমরান খান

নরেন্দ্র মোদির কাছে ‘শান্তির সুযোগ’ চাইলেন ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক দিকে শান্তির আহ্বান, অন্যদিকে ফের তথ্যপ্রমাণের অজুহাত। নরেন্দ্র মোদি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, ‘পাঠানপুত্র’ হলে কথা রাখুন, সন্ত্রাসের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিন ইমরান খান। 

জবাবে পাক প্রধানমন্ত্রী শুধু বললেন, ‘শান্তি ফেরানোর সুযোগ দিন মোদিজী’, এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘উপযুক্ত প্রমাণ’ দিলে ব্যবস্থা নেবেন— যা এর আগেও বহুবার বলেছেন পাঠানপুত্র। ফলে ইমরানের এই বার্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না নয়াদিল্লি। 

ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের যুক্তি, ২৬/১১ থেকে পাঠানকোট হামলা, পাকিস্তানকে বহুবার পাক মদতে সন্ত্রাসের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করেনি ইসলামাবাদ।


কী বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? ভোটে জিতে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইমরানের সঙ্গে তার কথোপকথন স্মরণ করে মোদি বলেছিলেন, সেই সময় তিনি ইমরানকে দারিদ্র এবং অশিক্ষার বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

মোদির কথায়, ‘‘ইমরান বলেছিলেন, তিনি পাঠানের সন্তান। তাই কথা দিলে সেই কথা রাখেন।’’ এর পরই মোদি চ্যালেঞ্জ ছোড়েন, ‘‘পাঠানের সন্তান হলে কথা রাখুন ইমরান।”

শনিবার রাজস্থানের টঙ্ক-এ মোদির এই চ্যালেঞ্জের জবাব ইসলামাবাদ থেকে এলো এক দিন পর। রবিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর দাবি, পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে ইমরান খান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার কথা রাখবেন।’

তার আরও বক্তব্য, “পাকিস্তানে জঙ্গি কার্যকলাপের কার্যকরী প্রমাণ দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এর পর মোদির উদ্দেশে পাক প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, “শান্তির জন্য একটা সুযোগ দিন।”

কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বিবৃতির প্রথম অংশে ‘কথা রাখা’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলে মোদীর পাঠানপুত্র কটাক্ষেরই জবাব দিয়েছেন ইমরান। পুলওয়ামা হামলার পরও এই একই কথা বলেছিলেন ইমরান। শুধু তার সঙ্গে ছিল হুঁশিয়ারি, ‘ভারত আক্রমণ করলে পাকিস্তান জবাব দেবে।’

বাকিটা পাকিস্তানের গতানুগিতক অবস্থান তথা অজুহাত। কেন ‘অজুহাত’? ভারত আগেও বলেছে, ২৬/১১-র মুম্বাই হামলায় জঙ্গিরা যে পাকিস্তান থেকে এসেছিল, আজমল কসাব পাকিস্তানের নাগরিক, হামলার মাস্টার মাইন্ড যে মাসুদ আজহার এবং সে যে পাকিস্তানের আশ্রয়েই রয়েছে— সে সবের দিস্তা দিস্তা নথি দেওয়া হয়েছে। 

আবার পাঠানকোট হামলায় শুধু নথি দেওয়া নয়, পাক তদন্তকারী দল বিমানসেনা ঘাঁটিতে পর্যন্ত এসে সরেজমিনে দেখে গিয়েছে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও নজির নেই। যতই তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হোক, ইসলামবাদ বলেছে, যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার ইমরান প্রমাণ চেয়ে পাকিস্তানের পুরানো অবস্থানকেই আরও একবার মজবুত করলেন ইমরান।

আর পুলওয়ামা হামলার পর ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্য, জইশ-ই-মোহাম্মদ পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী। তার প্রধান মাসুদ আজহার পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে রয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটাই কি যথেষ্ট প্রমাণ নয়। ব্যবস্থা অবশ্য নেওয়া হয়েছিল। 

পুলওয়ামা হামলার এক সপ্তাহ পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরের একটি মাদ্রাসা এবং মসজিদে (যা জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর কার্যালয় বলেই পরিচিত) প্রশাসনিক দখল নেয় পাক সরকার। 

তার দু’দিনের মধ্যেই আবার সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে গিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই মাদ্রাসা বা মসজিদের সঙ্গে জঙ্গি সংস্পর্শ নেই। নেহাতই সাদামাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় স্থান সেটি।

বাকি রইল শান্তির আহ্বান। পর্যবেক্ষদের মতে, এটাও কোনও নতুন বার্তা নয়। এক্ষেত্রেও বিদেশ মন্ত্রকের দীর্ঘদিনের অবস্থান, পাকিস্তান সন্ত্রাস বন্ধ না করলে কোনও আলোচনা নয়। এই কথা মাঝেমধ্যেই ইসলামাবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয় সাউথ ব্লক। 

সে সব জেনেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন ইমরান। অথচ সন্ত্রাস দমনের প্রশ্ন এলেই হয় প্রমাণ চাওয়া হয়, নয়তো পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসের অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে এ দিনের ইমরানের এই বক্তব্যকেও পাকিস্তানের স্বভাবসুলভ বক্তব্য হিসেবেই দেখছে নয়াদিল্লি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে