বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ০৫:১৫:০৯

মাথায় টুপি দেখলেই তাদের শত্রু ভাবছে শ্রীলঙ্কানরা

মাথায় টুপি দেখলেই তাদের শত্রু ভাবছে শ্রীলঙ্কানরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রেকর্ড খুব ভালো নয় শ্রীলঙ্কার। দাঙ্গা-ফ্যাসাদ-সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে দেশটির। তবে ইস্টার সানডের ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে হাজির হয়েছে। 

হামলায় স্থানীয় দুটি মুসলিম সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ-ক্ষোভ বাড়ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সিংহলিদের মধ্যে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে টার্গেটের শিকার হচ্ছে সাধারণ ও নিরীহ মুসলিমরা।

সেই সঙ্গে মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও। এখন টুপি দেখলেও সেটাকে শত্রু ভাবছে শ্রীলঙ্কানরা। বুধবার এএফপির এক প্রতিবেদনে হামলা পরবর্তী এ ভীতিকর পরিস্থিতি উঠে এসেছে।

শ্রীলঙ্কায় রোববার তিনটি চার্চ, তিনটি বিলাসবহুল হোটেল ও আরও দুটি স্থানে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫৯। আহত আরও শতাধিক। হামলার সঙ্গে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি ইসলামপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম আসছে। 

এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসও এ হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা দাবি করেছে। শ্রীলঙ্কা সরকার বলছে, নিউজিল্যান্ড ক্রাইস্টচার্চ হামলার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটির মুসলিমরা নতুন এক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। দিন কাটাচ্ছেন দাঙ্গার ভয়-আতঙ্ক নিয়ে।

হামলার পর নিজের ঘর থেকে প্রায় বের হননি বললেই চলে ৪১ বছর বয়সী মোহাম্মদ হাসান। পরিবারসহ কলম্বোয় বাস করেন তিনি। সবসময় এক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তিনি। তার আশঙ্কা, মুসলিম বলে বৌদ্ধদের আক্রমণের শিকার হতে পারেন তিনি। স্থানীয় একটি প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করেন তিনি। 

কিন্তু গত ৪ দিন ধরে বাড়ির বাইরে হতে বারণ করছে তার পরিবার। হাসানের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ মুসলিমের এখন একই অবস্থা। কলম্বোর ডেমাটাগোডার একটি জামে মসজিদের কাছেই নিজের বাড়ির সামনে এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার খুবই উদ্বিগ্ন এ ভেবে যে, আমি যদি মসজিদে নামাজ পড়তে যাই, আমি জীবন্ত ফিরে নাও আসতে পারি।’

হামলার এ ঘটনা নিশ্চিতভাবেই শ্রীলংকানদের জন্য বড় আঘাত। এবং এটা এখানকার মুসলিমরাও বুঝতে পারছে। এতে স্থানীয় বহু মুসলিম ও ইসলামী সংগঠন এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী জরিনা বেগম জানান, হামলার পর থেকে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি তারা। 

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, মুসলিমদের প্রতি ব্যাপক ক্ষুব্ধ বৌদ্ধরা। সেই ক্ষোভ মাঝে মাঝেই ফেটে পড়ছে। মুসলিম মায়ের কোলের শিশু কেড়ে নিয়েও হত্যা করা হচ্ছে। আমি কখনও ভাবিনি, হামলাকারীদের মনে নিরীহ মানুষের প্রতি এত ঘৃণা ছিল। তবে ঘৃণা থেকে আরও ঘৃণা ছড়ানো কাম্য নয়।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে