বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৭:৪২:০৬

ভারতের প্রতিবেশি দেশের সংখ্যালঘুরা মানছেন না মোদি সরকারের নাগরিকত্ব আইন!

ভারতের প্রতিবেশি দেশের সংখ্যালঘুরা মানছেন না মোদি সরকারের নাগরিকত্ব আইন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন বলছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যত অ-মুসলিম ব্যক্তি ধর্মীয় কারণে উৎ'পী'ড়ি'ত হয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতে এসেছেন, তারা সকলেই শ'র'ণা'র্থী হিসেবে এ দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

বিরোধীদের দাবি, নাগরিকত্ব পাওয়ার মাপকাঠি কখনওই ধর্ম হতে পারে না। এটা সংবিধান বি'রো'ধী। নিয়েই সারা দেশজুড়ে চড়ছে বি'ক্ষো'ভের পারদ। কেন্দ্রের এই আ'ই'নের বি'রু'দ্ধে পথে নেমেছেন মানুষ। কিন্তু যে প্রতিবেশী দেশের সংখ্যাল'ঘুদের জন্য এই আইন, তারা কী বলছেন?

সূত্রের খবর, তাদের মধ্যেও অনেকেই চাইছেন না ভারত সরকারের এই 'সুবিধা' পেতে। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি প্র'ত্যা'খ্যা'ন করছেন তারা। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের সংখ্যাল'ঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতের এই নতুন নাগরিকত্ব আইনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুবিধা গ্রহণ করতে মোটেই রা'জি নন।

ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি, পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিলের অধিকর্তা রাজা আসার মঙ্গলানি বলেছেন, “পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায় এই আইন প্র'ত্যাখ্যা'ন করেছে। এই আইন ভারতকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বিভ'ক্ত করবে। সেই বি'ভা'জনের সুবিধা পেতে চাই না আমরা। এটাই মোদি সরকারের প্রতি আমাদের পাক হিন্দুদের বার্তা। এক জন প্রকৃত হিন্দু কখনওই এই বি'ভা'জনের আইন সমর্থন করবে না।”

বস্তুত, এই আইনের যারা বিরো'ধিতা করছেন তাদের বক্তব্য, এই নতুন আইনটির মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অ'বৈ'ধ অভিবাসীদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা সংবিধানের মূল কাঠামোর প'রিপ'ন্থী। সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি ধ'র্মনির'পেক্ষ দেশ। যে কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের সঙ্গে সমান আচরণ করতে বাধ্য এ দেশের সরকার। নতুন আইন সেই সংবিধানকে আঘাত করছে। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকারও ল'ঙ্ঘ'ন করে।

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকতে হত৷ একইসঙ্গে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জ'রু'রি ছিল। সংশোধনী বিলে এই দ্বিতীয় নিয়মটিতে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আনা নির্দিষ্ট ছ'টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে। 

বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না। এই আইনের আওতায়, যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন, বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তা হলে তিনি বিদেশি অ'বৈ'ধ অভিবাসী বলেই গণ্য হবেন।

কয়েক সপ্তাহ আগে সংসদে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এসেছিল বিজেপি। গত বুধবার মধ্যরাতে তাতে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, তার পরেই এটি আইনে প'রিণ'ত হয়েছে। প্রতিবাদের আ'গু'ন জ্বলে উঠেছে সারা দেশ জু'ড়ে। বি'ক্ষো'ভে-বিদ্রোহে পথে নেমেছে সমস্ত বি'রো'ধী দল। 

আসামে হিংসার বলি হয়েছেন পাঁচ জন। মঙ্গলবার র'ণক্ষে'ত্র হয়ে ওঠে পূর্ব দিল্লির সীলামপুর এলাকা। বি'ক্ষো'ভকারী প্র'তিবা'দীদের সঙ্গে পুলিশি সং'ঘা'তে ব'ন্ধ হয়ে যায় রাস্তা, মেট্রো। কাঁদানে গ্যা'স ফা'টিয়ে জনতাকে ছ'ত্রভ'ঙ্গ করে পুলিশ। লা'ঠিচা'র্জও করা হয় নি'র্বি'চারে।

দেশের ভিতরের এই পরিস্থিতিতে নতুন আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রস্তাব প্র'ত্যা'খ্যা'ন করলেন পাকিস্তানের সংখ্যাল'ঘুরাও। হিন্দু ছাড়াও সে দেশের খ্রিস্টান ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষও এই আইনের সুবিধা পেতে চান না। 

পাকিস্তানি পার্লামেন্টের এক খ্রিস্টান সেনেটর বলেন, “ভারতের এই নতুন আইন ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে পরস্পরের বি'রু'দ্ধে দাঁ'ড় করিয়ে দিয়েছে। এতে মৌলিক মানবাধিকার ল'ঙ্ঘ'ন হচ্ছে। তাই আমরা প্র'ত্যা'খ্যা'ন করছি এই আইন।”

আরও এক সেনেট সদস্য আনোয়ার লালদীন মনে করিয়ে দেন কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা'তি'ল, বাবরি রায় ও দেশজুড়ে সংখ্যাল'ঘুদের বি'রু'দ্ধে বেড়ে চলা হিং'সার কথা। এই প্রসঙ্গগুলি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই আইন মৌলিক মানবাধিকারের স্প'ষ্ট ল'ঙ্ঘ'ন। আমরা সরাসরি এই আইন প্র'ত্যাখ্যা'ন করছি।”

পাকিস্তানের শিখ সম্প্রদায়ের তরফে বাবা গুরু নানকের নেতা গোপাল সিং বলেন, “কেবল পাকিস্তানেরই শিখরাই নয়, গোটা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায় এই আইন প্র'ত্যাখ্যা'ন করছে। কারণ ধর্মীয় ভিত্তিতে অগ্রাধিকার কোনও দিন চাইনি শিখরা।” 

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই শিখরা সংখ্যাল'ঘু। কাজেই সংখ্যাল'ঘু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই মুহূর্তে মুসলিমদের অবস্থা বুঝতে পারছি। আমি কোনও ধর্মের কোনও মানুষের স্বার্থেই এই আইনের সঙ্গে একমত হতে পারব না। বরং ভারতে এই মুহূর্তে যারা সংখ্যাল'ঘু তাদের প্রতি মোদি সরকার আরও সহানুভূতিশীল হোক।” সূত্র : দ্য ওয়াল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে