শুক্রবার, ০৬ মার্চ, ২০২০, ০১:৩১:০৬

যেসব কারণে পুতিন ছাড়া এরদোয়ানের সামনে আর কোন রাস্তা খোলা নেই

যেসব কারণে পুতিন ছাড়া এরদোয়ানের সামনে আর কোন রাস্তা খোলা নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের সারাকেব শহরে গত মাসে সিরিয়ার এক বিমান হা'মলায় একসাথে ৩৩ জন তুর্কি সৈন্যের মৃ'ত্যুর ঘটনায় একই সাথে ক্ষু'ব্ধ এবং টা'লমা'টাল হয়ে পড়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারাকেবে বো'মা হা'মলার লক্ষ্য ছিল বিদ্রো'হীরা।

কিন্তু পরে বেশ কিছু গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে বিদ্রো'হীদের সাথে যে তুর্কি সৈন্যরাও ছিল তা জেনেও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সাহায্যে সিরিয়া সেখানে হা'মলা চালায়। গত ৩০ বছরে তুরস্কের সেনাবাহিনীতে একটি হামলায় এত বেশি প্রা'ণহা'নি হয়নি। এরপরও কেন ইদলিবে সিরিয়ার সাথে লড়াই বন্ধ করতে চাইছেন এরদোয়ান?

প্রথম কথা, সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন নিয়ে তুরস্কের অভ্য'ন্তরে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য নেই। এরপর প্রায় ৫৫ জন সৈন্যের মৃ'ত্যুর পর বিরো'ধী কিছু রাজনীতিক এরদোয়ানকে পরো'ক্ষভাবে দা'য়ী করতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, ইদলিবের আকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণ না নেওয়ার আগে সিরিয়ায় সৈন্য ঢুকিয়ে তাদেরকে বি'পদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে সরকার।

তুরস্ক সীমান্তে গ্রিক বাহিনীর হা'মলা, এরদোয়ানের হুঁ'শিয়ারি

অভ্য'ন্তরীণ চা'পকে অবশ্য তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কূটনৈতিকরা বলছেন পুতিনকে চটানো এরদোয়ানের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এরদায়োনের পছন্দ হোক আর না হোক, সিরিয়ার স'ঙ্ক'টে রুশ প্রেসিডেন্ট নিজেকে প্রধান ক্রীড়নক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, এবং তার লক্ষ্য খুব পরিষ্কার, কোনোভাবেই বাশার আল আসাদের পরা'জয় পুতিন চাইছেন না।

কূটনৈতিকরা বলছেন,"আফগানিস্তান এবং ইরাকে সামরিক হ'স্তক্ষে'প করার সময় পশ্চিমা শ'ক্তিগুলোর পরিষ্কার কোনো ল'ক্ষ্য ছিলনা। কিন্তু রাশিয়া জানে কেন তারা সিরিয়ায় গেছে, এবং সেই উদ্দেশ্য থেকে তারা একপাও হটেনি এবং যে কোনো মূল্যেই তারা সেই উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।" সিরিয়া ও রাশিয়ার যৌথ বিমান হা'মলায় সিরিয়ায় শহরের পর শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হা'রিয়ে শরণার্থী হয়েছে।

লন্ডনে গবেষণা সংস্থা আইআইএসএস এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এমিল হোকায়েমকে উদ্ধৃত করে জনাথন মার্কস বলছেন, "সিরিয়ায় যে মানবিক স'ঙ্ক'ট তৈরি হয়েছে তা শুধু যু'দ্ধের প'রিণ'তিতে হয়নি, শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট আসাদের কৌশলই ছিল কিছু কিছু এলাকা জনশূ'ন্য করে ফেরা।" হোকায়েম মনে করেন, এভাবে বিপুল সংখ্যক শরণা'র্থীকে "অ'স্ত্র" হিসাবে ব্যবহার করে সিরিয়া এবং রাশিয়া তুরস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চা'প তৈরি করতে চেয়েছে।

একের পর এক মিসা'ইল গিয়ে আ'ঘা'ত হা'নছে পাকিস্তানের ঘাঁ'টিতে, প্রকা'শ্যে ভি'ডিও

ফলে এখন যখন সিরিয়া এবং তুরস্ক মু'খোমু'খি সং'ঘ'র্ষে জড়িয়ে পড়েছে, যু'দ্ধবিরতির জন্য পুতিনের দ্বা'র'স্থ হওয়া ছাড়া এরদোয়ানের উপায় কি? কিন্তু ইদলিবে যু'দ্ধবিরতি নিয়ে যে মী'মাং'সাই মস্কোতে হোক না কেন, তা কি টিকবে? জনাথন মার্কাস মনে করছেন সম্ভবত টিকবে না। কারণ তুরস্ক জানে ইদলিব নিয়ে তারা যদি পিছু হটে, তাহলে সিরিয়ায় অন্যান্য যে এলাকা তাদের নিয়'ন্ত্রণে রয়েছে সেগুলোতেও সিরিয়া আ'ক্র'মণ করতে পারে।

সেটি তুরস্কের সম'স্যা, কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো রাশিয়া ঠিক কি চাইছে? এবং সেটা পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য কতটা চ্যা'লে'ঞ্জ তৈরি করেছে? সিরিয়ার সাথে সাবেক রাশিয়ার সখ্যতা সাবেক সোভিয়েত সময় থেকেই। অনেক আগে সেখানে সোভিয়েত একটি নৌ ঘাঁ'টি ছিল। কিন্তু সিরিয়ার সরাসরি হ'স্তক্ষে'পের পর সেই নৌ ঘাঁ'টি এখন অনেক বড় এবং সেই সাথে পুরাদস্তুর একটি বিমান ঘাঁ'টি রাশিয়া তৈরি করেছে।

সিরিয়ার সাথে যে রাশিয়ার সম্পর্ক শুধু ঐতিহাসিক তাই নয়, এটি এখন বিশ্ব-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়ার মাধ্যমে রাশিয়া এখন একটি বার্তা দিতে চাইছে - রাশিয়া কথা রাখে এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। সিরিয়ায় তাদের এই ভূমিকার জন্য রাশিয়া এমনকী নেটো জোটের সদস্য তুরস্ককেও কাছে টানতে সমর্থ হয়েছে।

পশ্চিমাদের প্রতি বি'র'ক্ত এরদোয়ান এমনকী রাশিয়ার এস-৪০০ বিমান প্র'তির'ক্ষা ব্যবস্থা পর্যন্ত কিনেছেন। শা'স্তিস্বরুপ আমেরিকা তুরস্ককে তাদের অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যু'দ্ধবিমান বিক্রির চু'ক্তি স্থ'গিত করে, যেটা রাশিয়ার জন্য সুবিধাই হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়া রুশদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ট্রাজেডি।

এরদোয়ানকে নিয়ে মন্তব্য, তুরস্কের পার্লামেন্টে তুমুল মা'রামা'রি

বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাব পুনঃ-প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি মরিয়া। সিরিয়াকে তিনি সেই লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম একটি সিঁড়ি হিসাবে দেখছেন। সিরিয়া থেকে পুতিন এখন লিবিয়াতেও হাত বাড়িয়েছেন। সেখানে জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের বিরো'ধী মিলিশিয়া নেতা জে. হাফতারকে সমর্থন দিচ্ছেন তিনি। ভেনিজুয়েলার সরকার যাতে টিকে যায়, তার জন্য রাশিয়া সবরকম সহযোগিতা দিতে শুরু করেছে। কিন্তু রাশিয়াকে ঠেকাতে কি করতে পারে পশ্চিমারা?

জনাথন মার্কাস মনে করেন, সমস্যা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে এখন নেতৃত্বের একটি শূন্যতা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশ্ব-রাজনীতি নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। রাশিয়াকে এক নম্বর শত্রু ভাবতে তিনি রাজী নন। জার্মানি তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স'ঙ্ক'ট নিয়ে ব্যস্ত। ব্রিটেন বছরের পর বছর ব্রেক্সিট স'ঙ্ক'টে ঘু'রপা'ক খাচ্ছে। বাকি রয়েছে ফ্রান্স।

এ সপ্তাহের লন্ডনে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর রুশ বিষয়ক দূত পিয়ের ভিঁম'র সাথে কথা হয় জনাথন মার্কাসের। ফরাসী ঐ কূ'টনী'তিক পরিষ্কার ই'ঙ্গি'ত দেন বৈ'রিতার পথ ছেড়ে ফ্রান্স রাশিয়ার সাথে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী। ফ্রান্স অবশ্য বলছে তারা রাশিয়াকে কোনো ছাড় দিতে চায়না। ক্রাইমিয়া দ'খলের পর যে নিষে'ধা'জ্ঞা রাশিয়ার ওপর চা'পানো হয়েছে, তা অ'ব্যাহ'ত রাখতে হবে, তবে একইসাথে মস্কোর সাথে একটি সংলাপের রাস্তা খোলা রাখতে হবে। 

অবিশ্বাস্য ঘটনা, যশোর রোডে প্রযুক্তির সাহায্যে না ভেঙেই সরানো হচ্ছে চারতলা বাড়ি!

তবে, জনাথন মার্কাস বলছেন, অনেক পশ্চিমা কূট'নী'তিক ফরাসী প্রেসিডেন্টের এই নীতিতে ভরসা রাখতে পারছেন না। তাদের কথা - যে দেশটি পশ্চিমা দেশগুলোর পশ্চিমা দেশগুলোর নির্বাচনে হ'স্তক্ষে'প করছে, বাইরের দেশে রাসায়নিক অ'স্ত্র প্রয়োগ করছে, অ'ব্যাহ'ত-ভাবে পশ্চিমা স্বার্থে সাইবার হা'মলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাথে আস্থা তৈরির চেষ্টা অর্থহীন। 

পশ্চিমারা রাশিয়ার ব্যাপারে কৌ'শল নিয়ে কা'লক্ষে'পণ করতে পারে। কিন্তু তুরস্কের সেই সময় নেই। পশ্চিমাদের নিয়েও তিনি ভরসা হারিয়েছেন। ফলে সিরিয়ার একমাত্র বিদ্রো'হী নিয়ন্ত্রিত প্রদেশ ইদলিব নিয়ে তুরস্ক এবং সিরিয়ার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলা ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদায়োনের কাছে কাছে এই মুহূর্তে অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে