এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ভেতর এক টুকরো নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে স্বর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্ক যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ক্রমাগতই স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুবাইসহ বিশ্ববাজারে রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে দাম। স্বর্ণের দাম বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে স্বর্ণের দাম আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে স্বর্ণের দাম নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবাইয়ে প্রতি গ্রামে দাম পৌঁছেছিল ৪২০ দিরহাম এবং বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স ৩৫০০ মার্কিন ডলার। যদিও ছুটির দিনে কিছুটা মুনাফা গ্রহণের কারণে সামান্য পতন হয়েছে, তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সাময়িক।
বিশেষজ্ঞ লিন ট্রান জানান, চীনের বোয়িং অর্ডার বাতিল এবং কৌশলগত পুনর্মূল্যায়ন বাজারে ভীতি ছড়িয়েছে। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আলোচনার অগ্রগতির কথা বললেও, চীনের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। এই দ্বন্দ্বময় পরিবেশ স্বর্ণকে পরিণত করেছে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে।
এছাড়াও, বিশ্ববাজারের প্রভাব এখন এতটাই গভীর যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর চিন্তাভাবনা করছে। সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি কমলে এবং সুদের হার কমালে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দুর্বলতার কারণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে স্বর্ণ কিনতে ঝুঁকছেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে স্বর্ণের দামে।
পেপারস্টোনের গবেষণা কৌশলবিদ আহমদ আসসিরির মতে, যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছরের মধ্যে মন্দার সম্ভাবনা ৫২ শতাংশ। এমন অনিশ্চিত সময়ে স্বর্ণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক ধরনের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩২৪৫ থেকে ৩৩০০ ডলারের মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা স্তর। এই স্তর অতিক্রম করলে দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এদিকে, মার্কিন ইক্যুইটি বাজার যদি শক্তিশালী থাকে এবং ডলারের মান বৃদ্ধি পায়, তাহলে স্বর্ণের উপর কিছুটা চাপ পড়তে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি, স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার সময় মানুষ সাধারণত নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধানে থাকে, আর স্বর্ণ বরাবরই সেই নির্ভরযোগ্য বিকল্প।