আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পথেই হাঁটলো ভারত! বাংলাদেশের দেখাদেখি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে শুল্কছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। তাদের এই উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত চড়া শুল্কের প্রভাব কমাতে সাহায্যের পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বিশেষ সুবিধা দেবে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।
গত সোমবার (১৮ আগস্ট) তুলা আমদানিতে ১১ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হলো টেক্সটাইল। এই খাতে ক্ষতির প্রভাব কিছুটা কমাতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমিত সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে এ সিদ্ধান্ত।
এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতেও সহায়ক হতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা রপ্তানিকারক দেশ এবং একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় তারা ভারতীয় বাজারে আরও প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুসারে, গত ৭ আগস্ট ভারতীয় শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সহজ করতে মার্কিন তুলার ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির জন্য একই ধরনের ছাড় দিয়েছে।
ভারতীয় শিল্প খাতের একজন কর্মকর্তা বলেন, শুল্ক প্রত্যাহারের মূল লক্ষ্য হলো শিল্পের সমস্যা মোকাবিলা করা— যেমন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক ও তুলার মূল্যবৃদ্ধি। পাশাপাশি এটি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত ওয়াশিংটন থেকে তুলা আমদানির বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী হতে পারে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানায়, ২০২৫ সালে ভারতের ১২০ কোটি ডলারের তুলা আমদানির প্রায় সবটাই ২৮ মিলিমিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের স্ট্যাপল তুলা। ভারত-অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এরই মধ্যে ৫১ হাজার মেট্রিক টন তুলা শুল্কমুক্ত প্রবেশ করে। তাই ভারতের নতুন শুল্কছাড়ের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন অর্ডারে প্রভাব ফেলবে না
ভারতের শিল্প খাতের কর্মকর্তারা বলেন, বছরের পর বছর যে শুল্ক কমানোর দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, সেটি এবার এমন সময়ে কার্যকর করা হয়েছে, যখন এটি ভারতীয় কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। কারণ, তুলা তোলা শুরু হয় অক্টোবর থেকে এবং বাজারে আসে মার্চ নাগাদ— এ সময়টিই শীর্ষ মৌসুম।
রপ্তানিকারকরা বলেন, স্বস্তির এ পদক্ষেপ কেবল চলমান আমদানি করা চালানকে প্রভাবিত করবে। কারণ সময়সীমা এত কম যে নতুন অর্ডারে এর প্রভাব পড়বে না। তারা এ ব্যবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, এতে ভারত যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার ধরে রাখতে পারবে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে চলে আসছে ব্যবসা, ভারতের শঙ্কা
ভারতের বস্ত্রশিল্প কনফেডারেশনের (সিআইটিআই) বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে টেক্সটাইল এবং পোশাক আমদানি দ্রুত বাড়ছে।
‘২০২৫ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে টেক্সটাইল এবং পোশাক আমদানি যথাক্রমে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০২৪ সালের জুনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি,’ জানায় সিআইটিআই।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আশাব্যঞ্জক হলেও জুনে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। ওই মাসে ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের প্রবৃদ্ধির চেয়ে অনেক কম এবং ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে।
ভারতের বস্ত্রখাত মূলত তুলানির্ভর। তুলার মূল্য শৃঙ্খল সরাসরি প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেয় এবং দেশটির মোট টেক্সটাইল রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশে অবদান রাখে। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায়। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের চড়া শুল্কারোপ।
সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস