আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক লাখ ভারতীয়। দেশটির ১২টি রাজ্যে আজ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার ‘নিবিড় সংশোধন’ (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন-এসআইআর) শুরু হবে। কমিশনের দাবি, এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হলো বৈধ ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা এবং এবং অবৈধ ভোটারদের নাম তালিকা থেকে অপসারণ করা যায়।
বিরোধী দলগুলোর আশঙ্কা, প্রয়োজনীয় নথি না দেখাতে পারলে বহু মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকেবাদ পড়তে পারে। এতে বিশেষ করে মুসলমান, বিবাহিত নারী ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম বাদ পড়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ ১২টি রাজ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তবে আসামের নাম তালিকায় নেই, যদিও রাজ্যটিতে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন, আগামী ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিতরণ করা হবে। ভোটারদের নিজেদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ‘লিংক’ করতে হবে। যদি নাম না থাকে, তাহলে নির্বাচন কর্মকর্তারা নোটিশ পাঠাবেন এবং জন্মনিবন্ধন বা অন্যান্য পরিচয়পত্র যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন। অনলাইনেও নাম যাচাই ও লিংক করার সুবিধা থাকবে।
বিহারে সম্প্রতি এমনই একটি প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪৭ লাখ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিবাহিতা নারী ও পরিযায়ী শ্রমিক। অর্থনীতিবিদ ও কংগ্রেস নেতা প্রসেনজিৎ বসু প্রশ্ন তুলেছেন, যখন বিহারে এই প্রক্রিয়ার মামলা এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তখন অন্য রাজ্যে আবার কেন নতুন করে এসআইআর চালু করা হলো?
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০২ সালের তালিকা ও বর্তমান তালিকার মধ্যে গড়ে ৫০ শতাংশ নামের অমিল রয়েছে। অনেক ভোটারই জানেন না তারা তখন কোন বুথে ভোট দিয়েছিলেন।
সমাজ গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, গ্রামে মাত্র ১৫ শতাংশ বাড়িতে ইন্টারনেট আছে। সাধারণ মানুষ কীভাবে অনলাইনে নিজের নাম খুঁজে বের করবে? এতে মুসলমান ও আদিবাসী ভোটাররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
কলকাতার নাগরিক আন্দোলনকর্মী ফরিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামাঞ্চলে মানুষকে এমনভাবে ভয় দেখানো হয়েছে যে তারা সত্যিই আতঙ্কিত। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। এই আতঙ্কের শিকার হচ্ছেন মুসলমানরা।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, অনেক শ্রমিক অন্য রাজ্যে কাজ করেন। তাদের জন্ম নিবন্ধন বা স্কুল সার্টিফিকেট নেই। বাড়ি ফিরে এসে এই কাগজপত্র জোগাড় করা তাদের জন্য বড় বোঝা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, এসআইআরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন বৈধ ভোটার বাদ না পড়েন এবং অবৈধ ভোটারদের নাম তালিকায় না থাকে। প্রবীণ বা শারীরিকভাবে অক্ষম ভোটারদের সহায়তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক ও বুথ অফিসাররা থাকবেন বলেও জানান তিনি।