মঙ্গলবার, ০৯ মে, ২০১৭, ০২:৪১:৪৬

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে খরচ হয়েছে কোটি টাকা: নানা শাহ

 চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে খরচ হয়েছে কোটি টাকা: নানা শাহ

মেহেদী মাসুদ: নানা শাহ। চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন ১৯৯৫ সাল থেকে। কখনো খলনায়ক আবার কখনো ইতিবাচক চরিত্রে। মাঝে দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে আবার নিয়মিত অভিনয় করছেন। এর আগে একবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার মিশা সওদাগর–জায়েদ খান প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু পরাজিত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে  ওমর সানি এক সাক্ষাৎ​কারে অভিযোগ করেন, ‘আমাকে হারানোর জন্য একটা ছবির বাজেট ব্যয় করা হয়েছে!’ এরপর দুপুরে কথা হয় নানা শাহর সঙ্গে। নির্বাচনের নানা কিছু নিয়ে ​নানা শাহ বললেন ...

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন কেমন মনে হয়েছে?

পুরোটাই ছিল টাকার খেলা। তিনটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। সব প্যানেলই টাকা খরচ করেছে। কোনো প্যানেল বেশি করেছে, কোনো প্যানেল কম।

আপনি কত খরচ করেছেন?

চার আনা পয়সাও খরচ করিনি। আমি কে, আমার নীতি কী, আমার আচরণ—শিল্পীরা সবাই তা ভালো জানেন। তাই তো পাশ করতে পারিনি।

আপনি নির্বাচনের গোড়া থেকে জড়িত ছিলেন। এবার নির্বাচনে কী পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে?

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এবার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিছু কম–বেশি হতে পারে। পুরাটাই বলছি, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে। আমার কাছে কিন্তু প্রমাণ নেই।

এত টাকা!

উপায় নেই, নির্বাচন বলে কথা।

এখানে ভোট কেনা–বেচা হয়?

হয় মানে! বড় সংখ্যক ভোট বিক্রির জন্য তৈরি থাকে।

শিল্পীরা ভোট বিক্রি করেন?

একটা ব্যাপার খেয়াল করুন, আমাদের চলচ্চিত্রের মূল শিল্পী আছে ২০০–২২০ জন। তারা নিয়মিত কাজ করেন। তাদেরকেই দর্শক সব সময় দেখে। তাদের মধ্যেই আছেন অনেক তারকা। আছেন অনেক সিনিয়র শিল্পী। তাদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এবার মোট ভোটার ছিলেন ৬২৪ জন। এই যে বাকি ভোটার, তারা সবাই জুনিয়র আর্টিস্ট। আমাদের চলচ্চিত্রে এখন তাদের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। হাতে কোনো কাজ নেই। নিয়মিত বাসার ভাড়া দিতে পারে না, ঘরে বাজার নেই, ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারছে না। বছরে কয়টা ছবি তৈরি হয়? আর তাতে ক’জন অভিনয়ের সুয়োগ পান। ফলে নির্বাচনের সময় বাধ্য হয়ে তারা অন্য পথে পা বাড়ান। অভাব–অনটন এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।

নির্বাচনে এই জুনিয়র আর্টিস্টদের কী ভূমিকা থাকে?

 

নির্বাচনের ফলাফল একেবারে উল্টে দিতে পারে। আপনি ভাবছেন একরকম, পরে দেখবেন আরেক রকম। কারণ আপনি তো ওই ২০০–২২০ জন পরিচিত শিল্পীকে দিয়েই পুরো নির্বাচনের ফলাফল ধারনা করেন। যারা নির্বাচনে অংশ নেন, আসলে তাদের টার্গেট থাকে এই বড় অংশের জুনিয়র আর্টিস্টদের ভোট নিশ্চিত করা।

একটা ভোট কী পরিমাণ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে?

আলাদা করে ভোট খুব কমই বিক্রি হয়েছে। ভোটের আগে এই জুনিয়র আর্টিস্টরা নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করে। এরপর নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্যানেলের সঙ্গে গ্রুপ গ্রুপ গিয়ে আলোচনা করে। যারা বেশি টাকা দেয়, তাদেরকেই দলবদ্ধভাবে ভোট দেয়। আর এখানে পুরো গ্রুপকে টাকা দিতে হয়।

যারা জয়ী হন, তারা কীভাবে নির্বাচনে খরচের টাকা তুলে আনেন?

এটা কীভাবে সম্ভব! এই টাকা কখনোই তুলে আনা যায় না। এখানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, বিভিন্ন মিডিয়ায় তার নাম যাচ্ছে, ছবি যাচ্ছে, বক্তব্য দিচ্ছেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাচ্ছেন—এটাই, এর বেশি কিছু না।

যারা জুনিয়র আর্টিস্ট, ভোটার, তারা কাজ না করলেও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য থাকতে পারবেন?

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সংবিধানের একটা ধারা আছে। কিন্তু এদিকে কেউ খেয়াল করেন না। ওই যে বললাম, ভোটের বাজারে তারা অনেক মূল্যবান।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবে?

কিছুই পারে না। পারবে না। কারণ প্রযোজক আমাদের লক্ষ্মী আর পরিচালক আমাদের ক্যাপ্টেন। একমাত্র তারাই পারেন চলচ্চিত্রের উন্নতি ঘটাতে। আমরা শিল্পীরা এখানে সব সময়ই অলংকার। তবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি শুধুমাত্র শিল্পীদের দিকটা দেখতে পারে। তাদের সমস্যার কিছু সমাধান করতে পারে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এত ভোটার কোথা থেকে এসেছে?

এর আগে আহমেদ শরীফ আর মিজু আহমেদ যখন নির্বাচন করেছিলেন, তখন অনেক জুনিয়র আর্টিস্ট নামধারীকে সংগঠনের সদস্য করে নেওয়া হয়। ক্ষতিটা আসলে তখনই হয়েছে।

আর নির্বাচনের টাকা খরচের ব্যাপারটি, মানে ভোট কেনা–বেচা?

মান্না প্রথম যখন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, ওই সময় থেকে এই জুনিয়র আর্টিস্টদের কাছ থেকে ভোট কেনার প্রচলন শুরু হয়। গোড়াতে কিন্তু একটা ভোটের জন্য ২০০–৫০০ টাকার বেশি খরচ হতো না। এখন এই চিত্রটা পুরো পাল্টে গেছে।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব?

অবশ্যই সম্ভব। নির্বাচনের আগে যদি সব পক্ষ মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, কেউ এভাবে টাকা খরচ করবে না। তাহলে দেখবেন অনেক জুনিয়র আর্টিস্ট ভোট দিতেও আসবে না। একটা স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। শিল্পীরা যাকে পছন্দ করবেন, যাকে চাইবেন; তিনিই আসবেন। আর তার কাছ থেকে ভালো কাজও পাওয়া যাবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো নোংরামি হবে না। নির্বাচনের আগে একজন আরেকজনের প্র​তিদ্বন্দ্বী থাকলেও, নির্বাচনের পরই আবার সবাই সহকর্মী।

এখন রেশারেশির রেশটা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, কেন?

ও​ই যে বললাম টাকার খরচ। যিনি বা যারা টাকা খরচ করেছেন, অথচ আশানুরূপ ফল পাননি, তার সেই জ্বালা তো থাকবেই। এই যন্ত্রণা মিটতে সময় একটু বেশি লাগবে।

ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।-চ্যানেল আই
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে