মঙ্গলবার, ০৩ মে, ২০১৬, ০৮:১৮:৪২

নায়িকা পূর্ণিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া সেই রিকশাচালক শিল্পী আকবর কেমন আছেন?

নায়িকা পূর্ণিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া সেই রিকশাচালক শিল্পী আকবর কেমন আছেন?

ফয়সাল রাব্বিকীন : ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সেতো আর কারো আকাশে’- কিশোর কুমারের এ গানটি হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে গেয়ে সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিলেন রিকশা চালক আকবর। এরপর পুরো জীবনই যেন বদলে যায় তার। রিকশা শ্রমিক থেকে নিয়মিত সংগীতশিল্পীতে পরিণত হন তিনি।

হানিফ সংকেত তার ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য প্রতিভাই হাজির করেছেন। কিন্তু তার মধ্যে আকবর ছিলেন অন্যতম আলোচিত একজন। ‘ইত্যাদি’তে নিজের প্রতিভা দেখিয়ে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আকবরকে। এরপর হানিফ সংকেতের তত্ত্বাবধানেই প্রকাশ পায় তার প্রথম মৌলিক গানের একক অ্যালবাম। এ অ্যালবামে তার গাওয়া ‘হাতপাখার বাতাসে’ গানটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে এ গানটিতে নায়িকা পূর্ণিমার সঙ্গে পারফর্ম করে দারুণ সুখ্যাতি পান তিনি। পরে তিনি পূর্ণিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্ণিমা তাতে রাজি হয়নি। আর এ কারণে তাকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

তবে সব মিলিয়ে হানিফ সংকেতের বদৌলতেই আকবর নিজের প্রতিভা বিকশিত করে সংগীতের ভুবনে নিমগ্ন হন। তবে দীর্ঘ সময় ধরেই অনেকটা আড়ালে রয়েছেন এ শিল্পী। নতুন গান, অনুষ্ঠান- কোথাও নেই তিনি। শ্রোতাদের মনেও তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুরে পরিবারসহ থাকছেন আকবর। রিকশা চালানোর পেশায় আর কখনো ফিরে যেতে হয়নি তাকে। গান নিয়েই আছেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে বেশ অসুস্থ ছিলেন তিনি। এখন আগের চেয়ে খানিকটা সুস্থ।

নাটোরে শো করেছিলেন সেখানে থাকা অবস্থাতেই তার সঙ্গে কথা হয়। কেমন আছেন? দিনকাল কেমন চলছে। উত্তরে আবেগআপ্লুত আকবর বলেন, আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রথমত স্যার (হানিফ সংকেত) ও তারপর আপনাদের (মিডিয়া) সহযোগিতায় আমি এখন এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তবে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলাম। বিশেষ করে গত বছর জুলাইতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে একমাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম বাঁচবো না। কিন্তু সবার দোয়া ছিল।

খানিকটা থেমে তিনি বলেন, স্যার (হানিফ সংকেত) আমার অসুস্থতার সময় আমাকে যে সহযোগিতা করেছেন সেটা আজীবন মনে রাখবো। তার সহযোগিতা না থাকলে হয়তো সুস্থই হতে পারতাম না। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : আপনার ‘হাতপাখার বাতাসে’ গানটি ছিল ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়। কিন্তু তারপর থেকে টিভি অনুষ্ঠান কিংবা নতুন গানে আপনাকে পাওয়া যায়নি। আড়াল হওয়ার কারণ কি?

আকবর বলেন, দেখেন আমি একবেলা খেয়ে না খেয়ে থাকতাম। সেখান থেকে স্যার আমাকে তুলে এনেছেন। আমার জীবনটাই বদলে গেল। আমি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ঘুরেছি। এটা আমার কাছে স্বপ্ন ছিল কেবল। এখনো স্টেজে গাওয়ার জন্য মানুষ আমাকে ডাকে। এর চেয়ে বেশি আর কি প্রত্যাশা করা যায়! সব মিলিয়ে বলতে পারি, আমি খুব ভালো আছি। যতদিন বেঁচে আছি শ্রোতাদের গান শুনিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন : তাহলে নতুন গান কি সহসাই আসবে?

আকবর বলেন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা থেকে আমাকে অ্যালবাম করার জন্য বলা হয়েছে। আমি স্যারকেও জানিয়েছি বিষয়টি। এখন সামনে হয়তো একটি অ্যালবাম করবো। কারণ, আরেকটি অ্যালবাম আমার স্বপ্নও।

প্রশ্ন : আপনি অনেকটাই আড়ালে ছিলেন দীর্ঘদিন। আপনার কি মনে হয় শ্রোতারা আপনাকে মনে রেখেছে?

হেসে আকবর বলেন, গরম এলেই মানুষ কিন্তু গুনগুন করে ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে’ গানটি গায়। এটাই আমার অর্জন। আমার মতো ছোট মানুষকে শ্রোতারা এভাবে স্মরণ করেন, এটা আমার ভাগ্য।

প্রশ্ন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আমার একটাই পরিকল্পনা। সারা জীবন গান গেয়ে গেয়ে যেতে চাই। আর এ গান দিয়ে আমার এখন ভালোই চলে যাচ্ছে। গান পবিত্র একটি বিষয় আমার কাছে। এ পবিত্রতা নিজের ভেতর আজীবন লালন করতে চাই।

প্রশ্ন : আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন?

আমার এক মেয়ে ঢাকার আইডিয়াল স্কুলে পড়ে। আর দুই ছেলে যশোর থাকে। একজন পড়াশোনা করে। অন্যজন কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।-এম জমিন
৩ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে