তারিকুল চৌধুরী, খানসামা (দিনাজপুর) থেকে : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ । এই দেশ কৃষির উপরে নিভর্রশীল। দিনাজপুর খানসামার কৃষক প্রতি বছর কোন না কোন আবাদে এমন ভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে যা তাদের পাঁচ বছরে ও আর্থিক ক্ষতির পূরণ হবে না।
দিনাজপুর খানসামায় প্রথম দিকে ধানে ক্ষেতে ধানের শীষের থোর দেখে কৃষক ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে মনে করে অনেক স্বপ্ন দেখেছে কিন্তু এই সময়ে যখন শীষ বের হয় তখনই গলা পচা (ব্লাষ্ট রোগ) রোগ ধান ক্ষেতে দেখা যায়। দেখা যায় ধানের শীষ বের হওয়ার পরপরই কয়েক দিনের মধ্যে শীষ সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এই রোগের ইংরেজি নাম হলো ব্লাষ্ট ফাংগাস ভাইরাস। সবুজ ধান ক্ষেতের ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়া সাদা ধানের চিটা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। এই অবস্থায় দিনাজপুর খানসামার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়ে ।
সরজমিনে গোটা উপজেলা ঘুরে দেখা যায় ধান ক্ষেতে ধান সব পেঁকে গেছে,কাছে গেলে ধানের সাদা শীষ আর চিটা ছাড়া আর কোন চোখে পড়ে না। এই রোগের ব্যাপারে ৪নং খামারপাড়া ইউপি’র বলরাম বাজারের কৃষকদের কাছে জানতে চাইলে সালাম মেম্বার, অরবিন্দু, হাফিজ শাহ, আলতাফ হোসেন, ও আরো অনেকে জানায় বোরো ধান এইবারে যে হারে ধানের শীষের থোর হয়েছিল তাতে করে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল ও আশায় বুক বেধেছিল কৃষক। কৃষকগণ আরো জানান গলাপচাঁ রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এক হতে দুই দিনে ধানের শীষ সাদা হয়ে চিটা পাতান হয়ে যাচ্ছে।
খানসামার কৃষক ধারনা করছে বিএডিসি ধানের বীজের সমস্যার জন্যই এই গলাপচা রোগ মহামারি আকারে প্রসারিত হয়েছে। এই রোগ দলবাড়ি নামক দলাতে কমবেশি সব ধানের ক্ষেতে এই রোগ ধরেছে। যারা উপজেলা কৃষি পরার্মশ অনুযায়ি ক্ষেত পরিচর্যা করেছে তাদের ক্ষেতে এই গলাপচাঁ রোগ আসে নাই আর যারা অবহেলা করেছে তার ক্ষেতে মহামারি আকারে ধরেছে।
৩নং আঙ্গারপাড়া ইউপি’র সর্দার পাড়া গ্রামের সালাম, রমেশ, সাজু শাহীন জানায় কৃষি অফিসার ধান চাষী সবাইকে ব্লাষ্ট রোগের কারন এবং ব্লাষ্ট রোগের প্রতিকার সম্পর্কে এক থেকে দেড় মাস আগে মাঠ পর্যায়ে সচেতন করেছিল বলে জানায় । ২নং ভেড়ভেড়ী ইউপি’র হোসেনপুর গ্রামে মকবুল হোসেন, লতিফ, দুলাল হোসেনপুর গ্রামে মোথাপুকুর দলাতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমন করেছে বলে জানায়। ২৮-ধানে বেশি এই রোগ দেখা যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসারদের পরামর্শে যারা কীটনাশক স্প্রে করেছে তাদের ধানের ব্লাষ্ট রোগ দেখা যায়নি আর যারা অবহেলা করছে তাদের ক্ষেতে ব্লাষ্ট রোগ আক্রমন করেছে।
ইউনিয়ন কৃষি অফিসার একদেড় মাস আগ থেকে এই ব্লাষ্ট রোগ ও কারন, প্রতিকারের উপায় আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। খানসামা উপজেলা ঘুরে দেখলে একই দৃশ্য ধান ক্ষেতে লক্ষ্য করা যায়। যারা কৃষি অফিসারের পরার্মশ মতে চলেছে তাদের ধানক্ষেতে এই রোগের আক্রমন হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এজামুল হক জানান, এইবার আমাদের বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬৩৫ হেক্টর কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৪৬৩০ হেক্টর। বোরো মৌসুমে এই ব্লাষ্ট রোগ সমপর্কে কৃষককে এক থেকে দেড় মাস আগ থেকেই আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতন করেছি। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি অফিসারগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকের দাড়গোড়ায় গিয়ে এক থেকে দেড় মাস আগ থেকেই ব্লাষ্ট রোগ সম্পর্কে কৃষকদের ধারনা, রোগের কারণ, প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সচেতন করেছি। এই রোগের কারণ হলো জমিতে নাইট্রোজেন এর পরিমাণ বেশি, বৈরি আবহাওয়া ধানের বীজে এই রোগের ভাইরাস থাকা সহ আরো অনেক কারণও থাকতে পারে বলে জানান।
২৬ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস