নিউজ ডেস্ক: ১৯৮১ সালের ৩০ শে মে ভোররাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন একদল সেনা সদস্যের হাতে। ঘটনার আগের দিন তিনি চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বিরোধ মেটাতে।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত বিএনপি নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে ২৯ শে মে রাতে স্থানীয় সার্কিট হাউজে ঘুমিয়ে ছিলেন জিয়াউর রহমান। ঘটনার পর ৩০ শে মে সকালে সার্কিট হাউজে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর রেজাউল করিম রেজা।
রেজা বলছিলেন তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সার্কিট হাউজে পাঠানো হয়েছিল সেখানে আগে থেকে অবস্থান নিয়ে থাকা সৈন্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেবার জন্য।
“কর্নেল মতিউর রহমান আমাকে ডাকেন। ডেকে বলেন যে জিয়াউর রহমান ডেড বডিটা কিছু ট্রুপস সাথে নিয়ে সার্কিট হাউজ থেকে নিয়ে পাহাড়ের ভেতরে কোথাও কবর দেবার জন্য। আমি তখন তাকে বললাম যে আমাকে অন্য কাজ দেন। তারপর উনি মেজর শওকত আলীকে ডেকে ঐ দায়িত্ব দিলেন। তখন আমাকে ডেকে বললেন যে তুমি এদের সাথে থাক এবং সাথে যাও।
গিয়ে সার্কিট হাউজে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে আসবে। সার্কিট হাউজে যাবার পর আমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠি। উঠে দেখি সিঁড়ি বারান্দায় একটা ডেড বডি কম্বল দিয়ে ঢাকা আছে। পাশে একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কার ডেড বডি? সে বলল, এটা রাষ্ট্রপতির। আমি বললাম কম্বলটা খোল। সেটা খোলার পর দেখলাম তাঁর মাথাটা।
কাছাকাছি দূরত্বেই পড়ে ছিল কর্নেল এহসান এবং ক্যাপ্টেন হাফিজের মৃতদেহ। সেখান থেকে চলে যান মেজর রেজাউল করিম রেজা। অন্যদিকে মেজর শওকত আলী তার দল নিয়ে জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ কবর দিতে নিয়ে যায়। মেজর রেজাউল করিম রেজা সার্কিট হাউজ থেকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ফিরে এসে দেখেছিলেন যুদ্ধের পরিবেশ।
মেজর রেজার মতো যেসব সেনা কর্মকর্তা হয়তো ছুটিতে ছিলেন নতুবা অন্য কোন কাজে ছিলেন, তাদের ডেকে এনে বিভিন্ন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
মেজর রেজার কাঁধে নতুন চাপে মেজর জেনারেল এ মঞ্জুরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব।
চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তখনকার জিওসি মেজর জেনারেল এ মঞ্জুর ৩০ শে মে সারাদিন কর্মকর্তা ও সৈন্যদের বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে-ঘুরে বক্তব্য দিয়েছেন।
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকায় সারাদিন জেনারেল মঞ্জুরের সাথে থাকতে হয়েছে মেজর রেজাউল করিম রেজাকে।
জেনারেল মঞ্জুর যখন সেনানিবাসের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন একপর্যায়ে তাঁর কাছে ঢাকা সেনানিবাস থেকে একটি টেলিফোন আসে।
টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো যে জেনারেল এরশাদ মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সাথে কথা বলতে চান।
কিন্তু জেনারেল এরশাদের সাথে কথা বলার বিষয়ে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না জেনারেল মঞ্জুর।
জেনারেল এরশাদ ফোন করার পর দুইবার সে টেলিফোন রিসিভ করেন নি জেনারেল মঞ্জুর।
এ সময় জেনারেল মঞ্জুরের সাথে থাকা তার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিম রেজা পুরো ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন।
রেজা বলছিলেন , “আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে একটা ফোন আসল। জেনারেল মঞ্জুর ফোন রিসিভ করলেন। অপর প্রান্ত থেকে বলছে, জেনারেল এরশাদের সাথে কথা বলেন। তখন জেনারেল মঞ্জুর বলেন, আই ক্যান নট টক টু এরশাদ। এ কথা বলে তিনি টেলিফোনটা রেখে দিলেন। আবার টেলিফোন আসল।
আবার টেলিফোনে বলা হলো, ফর গড সেক স্যার, ফর গড সেক- ইউ টক টু জেনারেল এরশাদ। জেনারেল মঞ্জুর এমনভাবে ধরেছিলেন টেলিফোনটা আমি ক্লিয়ার শুনতে পাচ্ছিলাম। জেনারেল মঞ্জুর আবার বললেন, আই ক্যান নট টক টু হিম। এ কথা বলে টেলিফোনটা রেখে দিলেন।”
রেজার কাছে মনে হয়েছিল মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে জেনারেল এরশাদ হয়তো ক্ষমতায় যেতে যাচ্ছেন। কিন্তু জেনারেল মঞ্জুর হয়তো জেনারেল এরশাদকে মেনে নিতে চাননি।
জিয়া হত্যার পটভূমি
জিয়াউর রহমানকে হত্যার পটভূমি তৈরি করা হয়েছিল অনেক আগে থেকেই।
এ কথা মনে করেন বিএনপি’র প্রয়াত সিনিয়র নেতা ও ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ্। মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর আগে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে মি: শাহ একথা বলেছিলেন।
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় হান্নান শাহ্ ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদায় চট্টগ্রাম মিলিটারি একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন।
হান্নান শাহ বলেন, জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বছর দু’য়েক আগে থেকেই সেনাবাহিনীর কতিপয় সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। জিয়াউর রহমান এ দ্বন্দ্ব সম্পর্কে জানতেন। সেজন্য দ্বন্দ্বে লিপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের তিনি পরস্পরের কাছ থেকে বেশ দূরের জায়গাগুলোতে পোস্টিং দিয়ে রেখেছিলেন।
হান্নান শাহ্ বলেন, “সেনাবাহিনীর একদল অফিসার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তারা মনে করছিলেন, যে সব অফিসার এবং সৈনিক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকা ছিলেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, জিয়াউর রহমান তাদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল এবং তাদেরকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন।”
এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ থেকেই একদল সৈনিক এবং কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিল বলে হান্নান শাহ’র ধারণা।
মেজর রেজাউল করিম রেজাও বলছিলেন, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ডেকে নেবার পর কর্নেল মতিউরের কথায় তার সেটি মনে হয়েছে।
কর্নেল মতিউর তখন মেজর রেজাকে বলেন, “রেজা তুমি কোথায় ছিলে? তোমাকে তো সময়মতো পাওয়া যায় না। আমি বললাম, কী হয়েছে? তখন তিনি বললেন, তুমি জানো না? প্রেসিডেন্ট ইজ কিল্ড। এখন আমাদের সব ফ্রিডম ফাইটারদের ইউনাইটেড থাকতে হবে।”
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু বলতে রাজী হননি। সে সময় দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।
তখন সাত্তার দায়িত্ব নিয়ে ৩০শে মে দুপুরের দিকে রেডিও-টেলিভিশনে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন।
বিচারপতি সাত্তার সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।
যিনি পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছিলেন।
২০০৬ সালে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করেন।
৩০ শে মে সকাল সাড়ে আটটার দিকে বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব অলি আহমেদকে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানিয়েছেন।
তখন আহমেদ দ্রুত বঙ্গভবনে যান। সে সময় সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ, বিমান এবং নৌ বাহিনীর প্রধানসহ আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন।
তারা সকলে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
জিয়াউর রহমানকে হত্যার দিন অর্থাৎ ৩০ শে মে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল সেটি তার পরের দিন দ্রুত পাল্টাতে থাকে।
৩০ শে মে অনেক সেনা কর্মকর্তার মতো তাকেও মিলিটারি একাডেমি থেকে ডেকে নিয়ে বিদ্রোহের পক্ষে সমর্থন চাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু হান্নান শাহ্ তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু ৩১ শে মে ঢাকার সাথে সমঝোতার জন্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে অনুরোধ করা হয় হান্নান শাহকে।
৩১শে মে সারাদিন হান্নান শাহ্ ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।
সেদিন রাতে তিনি যখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বৈঠক করছিলেন, তখন সে বৈঠক থেকে বেরিয়ে জেনারেল মঞ্জুরসহ কয়েকজন পালিয়েছিলেন।
হান্নান শাহ্ বলছিলেন, ৩১ শে মে বিদ্রোহের সাথে জড়িত সৈনিক এবং অফিসারদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেল।
বিদ্রোহীদের পক্ষ ত্যাগ করে অনেকেই বিচারপতি সাত্তার সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। এসব খবর পেয়ে জেনারেল মঞ্জুর বিচলিত হয়ে পড়েন।
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে চট্টগ্রাম ক্যান্টনম্যান্ট ছেড়ে পালিয়ে যান জেনারেল মঞ্জুর ও আরো কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা।
সে রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে হান্নান শাহ্ বলেন, “৩১শে মে রাত ১১টার দিকে জেনারেল মঞ্জুরের বাসা থেকে হঠাত একটি ফোন আসল। তিনি আমাকে এবং আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে বসিয়ে রেখে ওনার অফিস থেকে বাসায় গেলেন। কিন্তু ঘণ্টা-খানেক পরেও তিনি ফিরে আসলেন না।
এমন অবস্থায় অন্য অফিসারদের তাদের কর্মস্থলে পাঠিয়ে দিয়ে আমি আমার কর্মস্থল মিলিটারি একাডেমিতে ফিরে আসলাম। ইতোমধ্যে আমি জানতে পারলাম, জেনারেল মঞ্জুর তাঁর পরিবার নিয়ে এবং অন্যান্য বিদ্রোহী অফিসাররা পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে।”
মেজর জেনারেল মঞ্জুর এবং কর্নেল মতিউর রহমান যে গাড়ির বহরে পালিয়েছিলেন, সেখানে ছিলেন মেজর রেজাউল করিম রেজা।
কিছুদূর অগ্রসর হয়ে একটি পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছানোর পর সামনে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান তারা। তখন তারা লক্ষ্য করেন সামনে কিছু সৈন্য পাহাড়ের দিকে ছুটোছুটি করছে। সে সময় জেনারেল মঞ্জুর গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাদের বহনকারী গাড়িটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে।
তখন তারা অন্য আরেকটি গাড়িতে করে পেছনের দিকে চলে আসেন। সেখানে একটি গ্রামে তারা গাড়ি থেকে নেমে হাটা শুরু করেন। এলাকাটিতে চা বাগান ছিল। জেনারেল মঞ্জুর তখন চা বাগানের এক কুলির বাড়িতে যান। কারণ তার সন্তানরা ছিল ক্ষুধার্ত। সেখানে জেনারেল মঞ্জুরের সন্তানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সাথে ছিলেন জেনারেল মঞ্জুরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিম রেজা।
রেজা বলছিলেন, “ওনারা যখন খেতে বসেছিলেন. তখন হঠাৎ কুকুরের ঘেউ-ঘেউ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমরা লক্ষ্য করলাম বেশ কিছুটা দূরে পাহাড়ি এলাকায় খাকি পোশাকের পুলিশ দেখা যাচ্ছে। তখন জেনারেল মঞ্জুর বললেন যে আমি পুলিশের কাছে সারেন্ডার করবো।”
পুলিশ সদস্যরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে আসছিলেন কখন জেনারেল মঞ্জুর জঙ্গলের ভেতরে দাঁড়িয়ে যান।
মেজর রেজার বর্ণনা অনুযায়ী জেনারেল মঞ্জুর তখন পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “এই যে বাবারা তোমরা ঐখানে থাক। সামনে আসিবে না। সামনে আসিলে তোমাদের অসুবিধা হইবে। আমি আসিতেছি। এ কথা বলে হনহন করে হেঁটে গিয়ে সারেন্ডার করলেন। তারপর আমিও গিয়ে সারেন্ডার করলাম।”
আত্নসমর্পনের পর তাদের হাটহাজারী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জেনারেল মঞ্জুর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা বললেন যে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা যাবে না।
তখন জেনারেল মঞ্জুর বলেন, ” সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দিবেন না কেন? আমার তো অনেক কিছু বলার ছিল। আমাকে তো বাঁচিয়ে রাখা হবে না। আমাকে তো মেরে ফেলা হবে। তখন জেনারেল মঞ্জুর বলেন যে, আমাকে তাড়াতাড়ি চিটাগাং জেলে পাঠান। আমাকে আর্মির কাছে দিবেন না। আর্মির হাতে দিলে আমাকে মেরে ফেলা হবে।”
তখন তাদের পুলিশের একটি ট্রাকে ওঠানো হলো। সে সময় একদল সেনা সদস্য আসলো সেখানে।
একজন সেনা সদস্য জেনারেল মঞ্জুরের স্ত্রীকে বললো, ভাবী আমরা আপনাদের নিতে এসেছি। কিন্তু জেনারেল মঞ্জুরের স্ত্রী বললেন তারা পুলিশের কাছে আত্নসমর্পন করেছন এবং চট্টগ্রাম জেলে যাবেন। তিনি সৈন্যদের সাথে সেনানিবাসে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
মেজর রেজার বর্ণনা অনুযায়ী তখন জেনারেল মঞ্জুর সেনা সদস্যদের বলেন , “তোমাদের লজ্জা করে না? তোমরা সব ঘটনা ঘটাইলা, তোমরা আবার সারেন্ডার করলা। তোমরা আইছো আমাকে ধইরা নিতে। যাও, আমি তোমাদের সাথে যাব না।”
সে সময় একজন নায়েব সুবেদার এসে জেনারেল মঞ্জুরের হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে এবং তাঁর হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে।
জেনারেল মঞ্জুরকে ধরে নেবার পর হত্যা কারা অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন আছে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সে মামলার অন্যতম আসামী।
অন্যদিকে পালানোর সময় গুলিতে নিহত হয়েছিলেন কর্নেল মতিউর রহমান।
অবশেষে কবরের সন্ধান
নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ১লা জুন জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ খুঁজতে বের হয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ। তাঁর সাথে ছিল কয়েকজন সিপাহী, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি স্ট্রেচার।
তারা কাপ্তাই রাস্তার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিলেন। তারা একটি অনুমানের উপর ভিত্তি করে নতুন কবরের সন্ধান করছিলেন। তখন একজন গ্রামবাসী এসে তাদের জিজ্ঞেস করেন যে তারা কী খোঁজ করছেন?
ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ এস গ্রামবাসীকে জিজ্ঞেস করেন, সেনাবাহিনীর সৈন্যরা সেখানে কোন ব্যক্তিকে সম্প্রতি দাফন করেছে কি না?
তখন সে গ্রামবাসী একটি ছোট পাহাড় দেখিয়ে জানালেন কয়েকদিন আগে সৈন্যরা সেখানে একজনকে কবর দিয়েছে।
তবে সে গ্রামবাসী জানতেন না যে কাকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে।
গ্রামবাসীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হান্নান শাহ্ সৈন্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন নতুন মাটিতে চাপা দেয়া একটি কবর।
সেখানে মাটি খুঁড়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং আরো দুই সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ দেখতে পান তারা।
তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ তুলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনা হয়। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ ঢাকায় পাঠানো হয়।
বিএনপি নেতা হান্নান শাহ্ মনে করেন, জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার না হওয়ায় ঘটনা নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে।
সে সময় বিদ্রোহের অভিযোগে ১৮জন সামরিক কর্মকর্তার বিচার করা হয়েছিল। এদের মধ্য ১৩জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। বিবিসি বাংলা
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস