শ্রীপুর (গাজীপুর): গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার আবদার এলাকায় মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধ'রা পড়ে যাওয়ায় মা ও তিন সন্তানকে গলা কে'টে হ'ত্যার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন গ্রেফতার পারভেজ।
সোমবার বিকেলে পারভেজ গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শরীফুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানব'ন্দি দিয়েছেন। বিষয়টি জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা আদালতের পরিদর্শক মীর রকিবুল হক।
নিহ'তরা হলেন- আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।
প্রবাসীর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গলা কে'টে হ'ত্যার ঘটনায় রোববার মধ্যরাতে আবদার এলাকায় অ'ভিযান চালিয়ে পারভেজকে গ্রেফতার করেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মা-সন্তানদের খু'নের কথা স্বীকার করলে আদালতে ১৬৪ ধারায় তার জবানব'ন্দি নেয়া হয়। দুই মাস আগেও পারভেজ নিহ'তের এক সন্তানকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে ধ'রা পড়েন। পরে ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পান।
আদালতের জবানবন্দির বরাতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, মা ও মেয়ের স্মার্টফোন চুরি করতে ২৩ এপ্রিল প্রতিবেশী বাবুলের বাড়ির পেছন দিয়ে কাজলের বাড়ির দেয়াল বেয়ে দোতলা বাড়ির ছাদে উঠেন পারভেজ। নিজের কাছে থাকা ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানো রশি কাটেন। পরে ছাদের গ্রিলের সঙ্গে রশি বেঁধে দোতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরে ঢোকেন।
পরে নূরা ও হাওরিনের রুমের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। নূরার তখন কানে হেডফোন ছিল। ছোট বোন হাওরিন ঘুমিয়ে ছিল। এক ঘণ্টা পর সবাই ঘুমিয়ে গেছে ভেবে রান্না ঘর থেকে বটি নিয়ে দোতলায় আসেন পারভেজ। মোবাইল নেয়ার জন্য নূরার মায়ের কক্ষের দরজার লক খোলার চেষ্টা করেন।
দরজা খোলার শব্দে নূরার মা জেগে ওঠেন। তিনি বাথরুম ও আশপাশে কেউ আছে কি-না খোঁজেন। এ সময় ফাতেমা তাকে দেখে চিনে ফেললে চিৎকার দিতেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হ'ত্যা করেন। তখন নূরা শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাকেও বটি দিয়ে কু'পিয়ে গু'রুতর জ'খম করেন পারভেজ।
এরপর নূরার ছোট ভাই ফাদিল জেগে উঠলে তার মাথায় কো'প দেন। এতে ফ্লোরে পড়ে গেলে প্রথমে তাকে গলা কে'টে নূরার খাটের নিচে রাখেন। তারপর হাওরিন ঘুম থেকে জেগে চিৎকার দিলে তাকেও কু'পিয়ে হ'ত্যা করেন। পরবর্তীতে নূরাকে ধ'র্ষণ করেন পারভেজ। নুরার মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে হাওরিনকেও ধ'র্ষণ করেন। এরপর সবার মৃ'ত্যু নিশ্চিত করার জন্য গলা কে'টে দেন পারভেজ।
সবশেষে নূরার মায়ের গলায় স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও নাকফুল খুলে নেন। হাওরিনের কান থেকে দুটি স্বর্ণের রিং খুলে নেন। আলমারি খুলে দুটি স্বর্ণের চেইন, আংটি, একটি ডায়েরি, নূরার মায়ের রুম থেকে দুটি মোবাইল নেন পারভেজ। মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার পায়জামার পকেটে রাখেন। এরপর হাত মুখ ধুয়ে গেট খুলে নিজের বাড়িতে চলে যান পারভেজ।
পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে সোমবার ভোরে পারভেজের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার ঘরের মধ্য থেকে পায়জামার পকেটে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালঙ্কার এবং রক্তমাখা গেঞ্জি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
'
পরিদর্শক হাফিজুর আরও বলেন, পারভেজ নিহ'তদের প্রতিবেশী। তার বাবার নাম কাজিম উদ্দিন।২০১৮ সালে তার চাচার বাড়ির ভাড়াটিয়া সাত বছরের শিশুকে ধ'র্ষণ শেষে হ'ত্যা করেছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল শ্রীপুর থানা পুলিশ। দীর্ঘ নয় মাস হাজতবাস শেষে বয়স বিবেচনায় সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় আসেন। এলাকায় এসে কিছুদিন আগেও নূরাকে উ'ত্ত্যক্ত করেন পারভেজ।