শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ০৪:৫৪:২৫

'ওই ব্যক্তিই প্রকৃত বাহাদুর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন'

'ওই ব্যক্তিই প্রকৃত বাহাদুর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন'

ইসলাম ডেস্ক : আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা রেগে গেলে নিজেকে আর স্থীর রাখতে পারেন না। রাগের মাথায় কিছু একটা করে বসেন অথবা মুখ দিয়ে খারাপ কথা বলে থাকেন। কিন্তু এর কোনোটাই করা উচিত নয়। এই প্রসঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন―‘ওই ব্যক্তিই প্রকৃত বাহাদুর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। [সহীহ মুসলিম : ২/৩২৬]

এক হাদীসে এসেছে― এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে নিবেদন করলেন― ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন আমলটি সর্বোত্তম? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন― ‘উত্তম চরিত্র’।

ওই প্রশ্নকারী সাহাবী ডান দিকে সরে এসে হুবহু ওই প্রশ্নটিরই পুনরাবৃত্তি করলো। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পূর্বের উত্তরটিই আবার শুনয়ে দিলেন যে, ‘সর্বোত্তম আমল হলো, উত্তম চরিত্র’।

তৃতীয়বার লোকটি বাঁ দিকে সরে এসে পূর্বের প্রশ্নটিই আবার পেতে দিলো। এবারও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বের উত্তরটিও শুনিয়ে দিলেন।

চতুর্থবার লোকটি নবীজির পেছন দিকে সরে এসে পূর্বের প্রশ্নটিই উপস্থাপন করলো। তখন নবীজি তাকে সম্বোধন করে বললেন― ‘কী হলো তোমার? কেনো তুমি বুঝছো না? সর্বোত্তম আমল হলো, উত্তম চরিত্র। আর তাহলো, যতোটুকু সম্ভব তুমি উত্তেজিত হবে না। [আত তারগীব ওয়াত তারহীব : ৫৬৭]

উপরোল্লেখিত হাদীসে আমাদেরকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, ‘রাগ করা যাবে না’। কেননা অপাত্রে ক্রোধ এতোটাই বিষাক্ত যে, তা মুহূর্তেই সমস্ত অর্জন ও কৃতিত্ব নষ্ট করে দেবে। ভেবে দেখুন, ‘মহৎ চরিত্র’ অর্জনের পথে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ হলো, ক্রোধ বর্জন করা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাত অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তিনি কখনই ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে ক্রোধ প্রকাশ করেননি। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত সীমারেখা কেউ লঙ্ঘণ করলে তিনি ক্রোধের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ করতেন। এ কারণেই কুরআন কারীম ঈমানদের প্রশংসা করে এ কথা বলেছে― ‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। [সূরা আলে ইমরান : ১৩৪]

এক হাদীসে এসেছে- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ক্রোধ হজম করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ওই ব্যক্তিকে সমস্ত সৃষ্টিজীবের সামনে ডেকে এ অধিকার দেবেন যে, তুমি জান্নাতের যে হূরটিকে ভালো লাগে, নিয়ে যাও। [শু‘আবুল ঈমান : ৬/৩১৩]

যদিও ক্রোধ একটি স্বভাবজাত প্রাকৃতিক বিষয়। কারণে-অকারণে তা চলে আসাই স্বাভাবিক। তবে তার জন্যে প্রয়োজন হলো, আত্মনিয়ন্ত্রণ। যখন ক্রোধ চলে আসবে তখন তার চাহিদার ওপর আমল না করে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। এ কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন―‘ওই ব্যক্তিই প্রকৃত বাহাদুর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। [সহীহ মুসলিম : ২/৩২৬]-প্রিয়.কম

মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক
আলেম, লেখক এ বহু গ্রন্থের অনুবাদক
১৪ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে